বিছানায় নির্বাক চোখে তাকিয়ে থাকেন বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার ‘ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমীর’ ইংরেজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. মিজানুল হক। যে ব্যক্তি মানুষ গড়ার কারিগর। ত্রিশটি বছর কতো না কথা বলেছেন আজ তিনি কথা বলতে পারছেন না। যিনি মানুষের অসুস্থতার কথা শুনলে ছুটে যেতেন তার পাশে। সেই ব্যক্তি অসুস্থ পরে থাকলেও আজ তার পাশে ছুটে আসেনা কেউই। দেশের সরকারও তার উপরে অবিচার করেছে। তিনি (মিজানুল হক) তিন বছর পূর্বে শিক্ষকতা থেকে অবসরে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পরেন। ত্রিশ বছর চাকরি শেষে তার শেষ সম্বল কল্যাণ ফান্ড ও অবসর ভাতার টাকা। তিনি শিক্ষক হিসাবে একজন সৎ ও আদর্শবান ছিলেন। আজ তিনি বয়সের ভারে ডায়াবেটিক, হাইপ্রেসার, কিডনি ড্যামেজসহ বেশ কয়েকটি জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। তিনি অর্থের অভাবে কোন চিকিৎসা নিতে পারছেন না।
শিক্ষক মো. মিজানুল হকের বাড়ি বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের ওরাবাঁশবাড়ি গ্রামে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক মো. মিজানুল হক ৩০ বছর ইংরেজি শিক্ষকতা শেষে গত ২০২২ সালের ১১ অক্টোবর অবসরে যান। এরপর তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ড বরাবরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করেছেন। শিক্ষক মো. মিজানুল হক একমাত্র ছেলে বরিশাল বিএম কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ইমরান হোসেন ২০০৮ সালে আত্মহত্যা করে। স্ত্রী সাজেদা খানমও বয়সের কারণে তেমন চলাচল করতে পারছেন না। মেয়ে সামিয়া আক্তারেরও অনেক পূর্বে বিয়ে হয়েছে। ফলে এখন তাদের দেখাশুনা করার মত কেউ নেই।
তার মেয়ে সামিয়া আক্তার জানান, আমার পিতা একজন আদর্শবান শিক্ষক ছিলেন। একজন মাধ্যমিক শিক্ষকের শেষজীবনে সম্বল থাকে চাকরি শেষে অবসর ভাতা ও কল্যাণ ফান্ডের টাকা। আমার পিতা আজ বিছানায় জীবনমৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে চলেছেন। টাকার অভাবে তাকে প্রয়োজণীয় চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছেনা। সরকারের কাছে দাবি জানাই- আমার পিতার অবসর ভাতা ও কল্যাণ ফান্ডের টাকা পেয়ে যেন তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে পারি।
ওই বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, একজন শিক্ষক সারাজীবন শিক্ষাদান করে আজ তার এই দুর্দিনে অবসর ভাতা ও কল্যাণ ফান্ডের টাকা না পায় তাহলে মরার পরে ওই টাকা পেয়ে কি লাভ হবে?
আগৈলঝাড়া মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ফারহানা আক্তার বলেন, মিজানুল হক স্যারের মত আর যেন কোন শিক্ষক বঞ্চনা ও ষড়যন্ত্রের শিকার না হয়। তার প্রাপ্ত অবসরভাতা ও কল্যাণ ফান্ডের টাকা যাতে দ্রুত পেয়ে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারেন সেজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
আগৈলঝাড়া ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমীর প্রধান শিক্ষক যতীন্দ্র নাথ মিস্ত্রী বলেন, আমাদের বেতনের একটি অংশ অবসর ভাতা ও কল্যাণ ফান্ডে জমা থাকে। চাকুরি শেষে অবসরে গেলে তিনি ওই টাকা পান। শ্রদ্ধেয় মিজানুল হক স্যারের টাকা যাতে অতি তাড়াতাড়ি পেতে পারে সেজন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি।
এব্যাপারে আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিখন বণিক বলেন, বিষয়টি আমার যানাছিলো না। আমি যথাযথ কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করবো।