গাংনীর অশ্লীল ভিডিও কান্ডে সেই শিক্ষক সাময়িক বহিষ্কার

এফএনএস (ফারুক আহমেদ; মেহেরপুর) : | প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর, ২০২৫, ০১:৩৪ পিএম
গাংনীর অশ্লীল ভিডিও কান্ডে সেই শিক্ষক সাময়িক বহিষ্কার

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার হাড়াভাঙ্গা এইস বি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সেই প্রধান শিক্ষক রাজু আহমেদকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।তবে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের দাবি ঐ প্রধান শিক্ষককে স্থায়ী বহিষ্কার করতে হবে না হলে লাগাতার আন্দোলন চলবে।

রোববার সকালে হাড়াভাঙ্গা এইস বি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা মানববন্ধন করে প্রধান শিক্ষক রাজু আহমেদ এর স্থায়ী বহিষ্কার দাবি করেন।

শিক্ষার্থী স্থানীয়রা বলেন, একজন প্রধান শিক্ষকের চরিত্র যদি এমন হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা সঠিক শিক্ষাটা পাবে কোথায়।আর এই ভিডিও যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে তখন তো ওই প্রতিষ্ঠানেরই শিক্ষার্থীরা দেখছে।আর ঐ  শিক্ষকের লজ্জা শরম যদি থাকে তাহলে কখনোই ওই স্কুলে প্রবেশ করবে না।তার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আমরা আরও কঠিন আন্দোলনে যাব।এমন অসভ্য নোংরা মানুষ  কখনোই শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা রাখে না।তাই তার স্থায়ী বহিষ্কার চাই।প্রধান শিক্ষক রাজু আহমেদের ছেলে এই প্রতিষ্ঠানে দশম শ্রেণী পড়ে।আর সেই প্রধান শিক্ষকই তার ছেলের  বান্ধবীর সাথে এ জঘন্য কাজ করেছে।

স্থানীয় মনিরুজ্জামান সেন্টু বলেন, এই শিক্ষক যদি  বিদ্যালয় থাকে তাহলে নতুন কোন ছাত্র-ছাত্রী আর এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হবে না।তাই আমরা সাময়িক বহিষ্কার নয় স্থায়ী বহিষ্কার চাই। তাছাড়া এই শিক্ষক চাকরি করার কোন যোগ্যতা রাখে না।এটা আমাদের প্রতিষ্ঠান।আমরা এই শিক্ষককে আর এখানে দেখতে  চায়না।

সাবেক শিক্ষার্থীর মাসুম পারভেজ বলেন, আমি গতবার এই প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলাম।এখন আমার বোন পড়ে এ প্রতিষ্ঠানে। প্রধান শিক্ষক রাজু আহমেদের সাথে দশম শ্রেণীর ছাত্রীদের যে অশ্লীল ভিডিও প্রকাশ হয়েছে তা অত্যন্ত জঘন্য।আমরা তার সাময়িক পদত্যাগ নয়  স্থায়ী পদত্যাগ চাই।পদত্যাগ না করলে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে।

স্থানীয় জুয়েল রানা বলেন, এখানে আমাদের ছেলেমেয়েরা পড়ে।আমাদের কত স্বপ্ন ছেলে মেয়েরা অনেক ভালো ভাবে লেখাপড়া শিখবে।কিন্তু প্রধান শিক্ষক এমন একটা কাজ করেছে ছেলে মেয়েদের নিয়ে চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছি।

নবম শ্রেণী শিক্ষার্থী ইয়াসমিন খাতুন বলেন, প্রধান শিক্ষক রাজু আহমেদ এর আগে ষষ্ঠ শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর সাথে এরম অনৈতিক ঘটনা ঘটিয়েছিল। আমরা প্রমাণের অভাবে তাকে কিছু করতে পারিনি।এবার সে দশম শ্রেণীর ছাত্রীর সাথে যে অনৈতিক কাজ করেছে এটা অত্যন্ত জঘন্য।আমরা এবার প্রমাণ পেয়েছি।তাই এই শিক্ষকের সম্পূর্ণ পদত্যাগ দাবি করছি।আমরা হেডমাস্টারের বিচারের পাশাপাশি দশম শ্রেণীর ওই ছাত্রীরও বিচার চাই।কারণ ওই ছাত্রীও দোষী।

হাড়াভাঙ্গা এইস বি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক জামশেদ আলী বলেন, ঐ শিক্ষকের ছাত্রীর সাথে যে অনৈতিক কাজ করেছে আমরা চাই এটার বিচার হোক।আমাদের অনেক কষ্টে গড়া এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।একজন শিক্ষকের জন্য এটা নষ্ট হয়ে যাবে এটা কখনোই আমরা হতে দেব না।

এইচ বি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মোঃ মকলেছুর রহমান বলেন, হাড়াভাঙ্গা এইসবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে এক ছাত্রের যে অনৈতিক ঘটনা ঘটে গেছে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।আমরা স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি বসে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছি।আর স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য সরকারি বিধি মোতাবেক  বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।এছাড়া এ ঘটনা নিয়ে শিক্ষার্থী অভিভাব ও স্থানীয়রা খুব ক্ষুব্ধ রয়েছে তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো:মনিরুল ইসলাম(অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) বলেন,হাড়াভাঙ্গা এইস বি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের ভিডিও আমরা দেখেছি।তবে এ ব্যাপারে এখনো লিখিত কোন অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।এবং লিখিত অভিযোগটি ঊর্ধ্বতন উদ্বোধন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হবে।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আনোয়ার হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে আমরা বিষয়টি জেনেছি।তবে এ ব্যাপারে এখনো লিখিত কোন অভিযোগ পাইনি।লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য: শুক্রবার বিকেলে প্রধান শিক্ষক রাজু আহমেদ ও দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর একটি অশ্লীল ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের  সৃষ্টি হয়।বিষয়টি নিয়ে পুরো গাংনীতে তোলপাড় শুরু হয়।এ ঘটনায় লজ্জায় পড়ে যান পুরো শিক্ষক সমাজ। 

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে