বরিশালের সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ, যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ

এফএনএস (বরিশাল প্রতিবেদক) : | প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর, ২০২৫, ০৫:১৩ পিএম
বরিশালের সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ, যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ

হাফ ভাড়া দেয়াকে কেন্দ্র করে বাস শ্রমিক ও বরিশাল সরকারি বজ্রমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনার জেরধরে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে অভ্যন্তরীন ও রাজধানীসহ সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এতে চরম দুর্ভোগে পরেছেন যাত্রীরা। রবিবার (১৬ নভেম্বর) সকাল থেকে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে কোন গন্তব্যের উদ্দ্যেশে বাস ছেড়ে যায়নি। বাস মালিকদের দাবি, শিক্ষার্থীরা তাদের প্রায় দুইশতাধিক বাস ভাঙচুর ও দুইটিতে অগ্নিসংযোগ করেছে। এতে তাদের প্রায় তিন কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি কমপক্ষে ৩০ জন শ্রমিককে মারধর করে আহত ও বাসের কাউন্টারগুলো ভাঙচুর করে লুটপাট করা হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও ক্ষতিপূরণ না পাওয়া পর্যন্ত বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।

অপরদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রবিবার বেলা ১১ টার দিকে বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। তারা আহত শিক্ষার্থীদের উন্নত চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনসহ হামলাকারীদের বিচারের দাবি করেন। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, হাফভাড়া দেয়ার সময় বাসের সুপারভাইজার শিক্ষার্থীর সাথে অশালীন আচারন করে তাকে মারধর করে। খবর পেয়ে তারা নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে বাস মালিক গ্রুপের নেতৃবৃন্দের কাছে বিচার দাবি করেন। এসময় শ্রমিকরা তাদের ওপর অর্তকিতভাবে হামলা চালায়। এতে তাদের কমপক্ষে ৩০ জন ছাত্র আহত হয়েছে।

বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন-গত বছরের ১৮ আগস্ট মালিক সমিতির একটি অফিস আদেশে সরকারি ছুটির দিনসহ সর্বদা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফভাড়া নেয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু শনিবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে হিজলা থেকে ছেড়ে আসা জোহান পরিবহনে বিএম কলেজের দুই শিক্ষার্থী মুলাদী থেকে বরিশালে আসার পথে শিক্ষার্থী পরিচয়ে অর্ধেক ভাড়া দিতে চাইলে বাসের সুপারভাইজার তা নিতে অস্বীকার করেন। এ নিয়ে বাগবিতন্ডার একপর্যায়ে বাসের স্টাফরা বিএম কলেজের ছাত্র আবু বক্করকে মারধর করে আহত করে। বিষয়টি মোবাইল ফোনে জানতে পেরে তারা ২০/২৫ জন ছাত্র সন্ধ্যায় নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে এসে বিষয়টি বাস মালিক গ্রুপের সভাপতিকে অবহিত করেন। এ সময় বাস মালিক গ্রুপের নেতাদের উস্কানিতে শ্রমিকরা শিক্ষার্থীদের ওপর অর্তকিতভাবে হামলা চালায়। এতে কমপক্ষে ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হন।

বাস শ্রমিকরা জানিয়েছেন-জোহান পরিবহন নামের বাসের চালক হিরন নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের কাছে ফিলিং স্টেশনে পৌঁছানোর পর পরই আগেই সেখানে উপস্থিত থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী এসে তাকে মারধর করে। এরপর উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। পরবর্তীতে শত শত শিক্ষার্থীরা নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে এসে বাসগুলো ভাঙচুরের পাশাপাশি নূর পরিবহনসহ দুটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের নথুল্লাবাদ টার্মিনাল এলাকায় দুই ঘন্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। পরে সেনাবাহীনির হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে।

শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শাহাদাত হোসেন লিটন বলেন, আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখেছি। আমাদের যে গাড়িগুলো ভাঙচুর করা হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আহত শ্রমিকদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। একইসাথে পরবর্তীতে যেন এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। এরপর গাড়ি চলাচল শুরু করা হবে। নথুল্লাবাদ বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন বলেন, শনিবারের নৈরাজ্যে দুইশ’ বাস সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। একাধিক পরিবহন কাউন্টার ভাঙচুর করে লুটপাট করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এতো বড় ঘটনা ৪০ বছরে কখনও ঘটেনি। এমনকি মসজিদের ভেতরে আশ্রয় নেয়া শ্রমিকদেরকেও শিক্ষার্থীরা মারধর করেছে। এ ঘটনায় প্রশাসন সুষ্ঠু বিচার না করা পর্যন্ত গাড়ি রাস্তায় নামবে না। প্রয়োজনে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।

বরিশাল মেট্রোপলিটন এয়ারপোর্ট থানার ওসি আল মামুন উল ইসলাম বলেন, শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এ ঘটনায় কোনও পক্ষ থানায় অভিযোগ দায়ের করেননি। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। পাশাপাশি সহিংসতা এড়াতে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে