জাল নোটের ছড়াছড়ি

কঠোরভাবে প্রতিহত করতে হবে

এফএনএস | প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর, ২০২৫, ০৭:১৬ পিএম
কঠোরভাবে প্রতিহত করতে হবে

দেশের বাজারে জাল নোটের স্রোত এমন এক স্তরে পৌঁছেছে যেখানে এটি আর শুধু আর্থিক অপরাধ নয়; বরং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও রাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিবেশকে একসঙ্গে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। সামপ্রতিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সীমান্ত ঘেঁষা অপরাধচক্র অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি জাল টাকা বাংলাদেশে প্রবাহিত করছে, যা বাজারে প্রকৃত টাকার সঙ্গে প্রায় অমোচনীয়ভাবে মিশে যাচ্ছে। একটি জাল নোট উৎপাদনের পেছনে যেভাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের চক্র কাজ করছে এবং প্রতি এক লাখ টাকার বিপরীতে ক্রেতাদের কাছ থেকে কয়েক হাজার টাকা আদায় করছে, তা তাদের সংগঠিত শক্তি ও আর্থিক সক্ষমতার আকার স্পষ্ট করে। যে মানের জাল নোট বাজারে ঢুকছে, তা শনাক্ত করতে অভিজ্ঞ ব্যাংকারদেরও বিপত্তি হচ্ছে। সাধারণ মানুষের দুর্দশার কথা তো আরও সহজেই অনুমান করা যায়। গ্রামের পোস্ট অফিসে জাল নোট বিতরণের মতো ঘটনা ইঙ্গিত দেয়, এই নেটওয়ার্কের শেকড় সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভেতরেও অনুপ্রবেশ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী, নোটের প্রচলনব্যবস্থা বিঘ্নিত হলে মূল্যস্ফীতি অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়তে পারে, বৈধ অর্থপ্রবাহ সংকুচিত হবে, এবং দেশীয় বাজারে আস্থা কমে যাবে। পাশাপাশি একে ব্যবহার করে কালো অর্থ সৃষ্টি, পাচার ও অবৈধ লেনদেন পরিচালনার ঝুঁকিও বাড়বে। তবে সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো নির্বাচনকে ঘিরে এই নাশকতার সম্ভাব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। বিশ্লেষকরা মনে করেন, অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির জন্য পরিকল্পিতভাবে জাল টাকা ছড়িয়ে ভোটারদের বিভ্রান্ত বা প্রভাবিত করার চেষ্টা হতে পারে। অর্থাৎ, অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াও একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। এই অবস্থায় শুধুই সীমান্ত নজরদারি বাড়ানো যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন ব্যাংকিং খাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার শক্তিশালীকরণ, জাল নোট শনাক্তকরণ প্রযুক্তির দ্রুত আধুনিকায়ন, এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্ভাব্য দুর্বলতা শনাক্ত করে তা অবিলম্বে দূর করা। পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়ানো অপরিহার্য কারণ শেষ পর্যন্ত প্রতিদিনের লেনদেনে সতর্কতা অবলম্বন করা সাধারণ মানুষের পক্ষেও একটি প্রতিরক্ষা। অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার স্বার্থে সরকার, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং নাগরিক সমাজকে এখনই সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। জাল নোটের এই অদৃশ্য অগ্নিস্রোত থামাতে না পারলে এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতার ওপর গভীর ক্ষত সৃষ্টি করবে।