মুজিব কোট ছাড়লেই কেউ বিএনপি হয়ে যায়না: ড. আসাদুজ্জামান রিপন

এফএনএস (আবু নাসের খান লিমন; লৌহজং, মুন্সীগঞ্জ) : | প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর, ২০২৫, ০৪:৩৭ পিএম
মুজিব কোট ছাড়লেই কেউ বিএনপি হয়ে যায়না: ড. আসাদুজ্জামান রিপন

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ডক্টর আসাদুজ্জামান রিপন বলেন,  মুজিব কোট  ছাড়লেই কেউ বিএনপি হয়ে যায় না। যারা আওয়ামী লীগের হয়ে অত্যাচার করেছে, তাদের পুনর্বাসনের দরকার নেই। বিএনপির কর্মীর অভাব নেই। অবশ্যই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে-মানুষকে অত্যাচার করার জন্য, খুনের রানীকে সমর্থন দেওয়ার জন্য। আজ আওয়ামী লীগ আর আওয়ামী লীগ নেই-এটা এখন “পলাতক লীগ”।

সোমবার মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার ঢাকা মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের পদ্মা উত্তর থানার পশ্চিমে  মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের সর্বোচ্চ সাজা দেয়ার দাবিতে নাগরিক জমায়েত প্রতিবাদ সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরোও বলেন, আজ ১৭ই নভেম্বর-বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারের জন্য যে আন্তর্জাতিক আদালত ও ট্রাইব্যুনাল রয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের ১৫ বছরের জনগণের কাঁধে চেপে বসা এক অবৈধ স্বৈরাচার, অবৈধ প্রধানমন্ত্রী, যিনি জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছেন, গুম-খুনসহ অসংখ্য গুরুতর অভিযোগের মুখোমুখি-তার বিচার কার্যক্রম চলছে।

আমরা আশা করি এই বিচারের মাধ্যমে তার জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। আমরা চাই অবিলম্বে ন্যায়সঙ্গত বিচার হোক, এবং তার অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা হোক।

গত বহু বছর ধরে তিনি তার বিরোধীদের দমন করেছেন, মানুষের ওপর গুম, হত্যা ও নির্যাতনের মাধ্যমে নিজের শাসনকে পাকাপোক্ত করেছেন। আমার সহযোদ্ধা ইলিয়াস আলীকেও গুম করা হয়েছিল। যারা তার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন-তাদের অনেককে হত্যা, গুম ও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। অনেকে পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারেনি। এই “খুনের রানী”, জনগণের ক্ষমতা হরণকারী ব্যক্তি ১৫ বছর দেশের ওপর শাসন ও শোষণ চালিয়েছেন। নির্বিচারে লুটপাট করেছেন, দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চাপিয়ে দিয়েছেন।

তার নির্দেশেই পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন শক্তি ব্যবহার করে বিরোধীদের দমন করা হয়েছে। ফলে দেশের মানুষ অবশেষে ১৫ বছর পর তাকে ক্ষমতা থেকে নামিয়েছে। তিনি গর্ব করে বলতেন “শেখের বেটি পালায় না”-কিন্তু এখন তিনি বিদেশে পালিয়ে আছেন।

আমাদের জীবনের মূল্য তিনি কখনোই দেননি। আমাদের দলের অনেক নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। অনেকে অন্যায়ভাবে ফাঁসির মুখে পড়েছে। তাই আমরা অন্যায়ের প্রশ্রয় চাই না-আমরা চাই তার ন্যায়সঙ্গত বিচার এবং প্রয়োজনীয় শাস্তি।

তিনি অসংখ্য মানুষকে হত্যা, খুন, গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করেছেন। আমাকেও নির্যাতন করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে ৩৭টির বেশি মামলা দেওয়া হয়েছিল। আমি যখন হাসপাতালে অক্সিজেন নিয়ে শ্বাস নিতে কষ্ট পাচ্ছিলাম, তখনও আমাকে হুইলচেয়ারে করে আদালতে নেওয়া হয়েছিল। আমার আইনজীবী বলেছিলেন আমি গুরুতর অসুস্থ-তবুও তিনি রেহাই দেননি। অপারেশনের আট দিনের মাথায় আমাকে আদালতে দাঁড় করানো হয়েছিল।

আমার মতো অসংখ্য মানুষ এভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। যেই গোপালগঞ্জের বিচারক আমাকে এমন অবস্থায় জেলে পাঠিয়েছিলেন-পরবর্তীতে তাকেই পুরস্কার হিসেবে হাইকোর্টের বিচারপতি বানানো হয়েছে। এমন অবিচারের জন্য সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

আজ পদ্মা সেতুর উত্তর প্রান্তে আমাদের মতো মজলুম মানুষরা তার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। যারা তার সময় কোনো ত্যাগ করেনি, যারা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছে-তারা আজ রাজপথে নেই। অথচ যারা নির্যাতিত হয়েছে-তারা আজ ন্যায় বিচারের জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সন্ত্রাসী আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, হত্যা ও মামলা করেছে-তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আপনি আজ তাদের সাথে হাত মিলিয়ে চলছেন। দল ভারী করার জন্য এসব সন্ত্রাসী, লুটেরা, মাদক ব্যবসায়ীদের বিএনপিতে আনার কোনো প্রয়োজন নেই। যারা জনগণের ঘৃণার পাত্র-তাদের দলে রাখা উচিত নয়।

ড. আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের দেশের এমপিরা একবার এমপি হলেই এলাকায় থাকে না। তারা শহরে থাকে, আর এলাকায় এলেও শুধু প্রধান অতিথি হয়ে আসে। আমরা অতিথি এমপি চাই না-আমরা চাই এলাকার সন্তান হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এমপি। যদি এমপি এলাকায় থাকেন-উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, ওসি-সবারই এলাকায় থাকা নিশ্চিত হবে। এতে ঘুষ-দুর্নীতি কমবে, আইনশৃঙ্খলা ভালো থাকবে, উন্নয়ন সঠিকভাবে হবে। হাসপাতাল, স্কুল, রাস্তা-সবকিছু সঠিকভাবে তদারকি করা যাবে।

মানুষ যে পরিবর্তনের জন্য ৫ আগস্ট আন্দোলন করেছে-তার প্রতিফলন আগামী নির্বাচনে দেখতে চাই। আমরা এমন সরকার চাই, যাকে আমরা বলতে পারি-এটাই আমাদের সরকার।

ইমাম না থাকলে মসজিদের কাজ চলে না, ওসির কাজ চৌকিদার করতে পারে না। যার কাজ তারই করতে হবে। তাই আমি নিজে মানুষের মাঝে থাকি-সহযোগী পাঠিয়ে দায়িত্ব এড়াই না।

আমি সারা জীবন মানুষের জন্য রাজনীতি করেছি-নিজের সুবিধার জন্য নয়। আমি মানুষের কথা বলি, দেশের কথা বলি। আমরা ভালো থাকলে দেশও ভালো থাকবে।

ন্যায়বিচারের দাবিতে, মানুষের অধিকারের জন্য আমরা আজ এখানে একত্রিত হয়েছি-পদ্মা সেতুর উত্তর প্রান্তে। মুন্সীগঞ্জ জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান খানের সঞ্চালনায় এবং  লৌহজং উপজেলা বিএনপি নেতা মোসারফ হোসেন নসু-র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লৌহজং উপজেলা  সেচ্ছাসেবকদলের সাবেক সভাপতি, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সদস্য শেখ জাহাঙ্গীর আলম, বর্ষিয়ান বিএনপি নেতা আব্দুর রহমান শেখ,সরকারী লৌহজং বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব দেওয়ান জহির আমিন, হলদিয়া ইউনিয়ন বিএপি নেতা কামাল খান, কুমারভোগ ইউনিয়ন বিএনপি নেতা ইলিয়াস শেখ,থানা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য দেওয়ান আল-আমিন, কুমারভোগ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি রিয়াজ আহম্মেদ প্রমুখ।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে