মানবসভ্যতার অগ্রযাত্রায় নৈতিকতা এমন এক মৌলিক শক্তি, যার অভাবে জ্ঞান অন্ধ, ক্ষমতা নিষ্ঠুর, আর স্বাধীনতা স্বেচ্ছাচারে পরিণত হয়। নৈতিকতা মানুষের আত্মাকে আলোকিত করে, তাকে সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও মানবিক করে তোলে। সভ্যতার ইতিহাসে প্রতিটি উত্থান-পতনের মূলে দেখা যায় নৈতিকতার অবস্থান-যখন নৈতিক মূল্যবোধ শক্তিশালী থাকে, তখন সমাজ সুসংগঠিত, সুশৃঙ্খল ও স্থিতিশীল হয়; আর যখন তা ভেঙে পড়ে, তখনই শুরু হয় অবক্ষয়, বিশৃঙ্খলা ও আত্মবিনাশ। একজন মানুষ যতই শিক্ষিত হোক, যতই ধনী হোক, যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, যদি তার নৈতিকতা না থাকে, তবে সে কেবল সমাজের জন্য নয়, নিজের জন্যও ক্ষতিকর। নৈতিকতা এক অর্থে মানুষের ভিতরের আলো, যা অন্ধকারের মধ্যে পথ দেখায়, যা মানুষকে মানুষ রাখে। এই নৈতিকতার ভিত্তি গড়ে ওঠে শিশুকাল থেকে, কারণ শিশু হলো সমাজের ভবিষ্যৎ প্রতিচ্ছবি। শিশুর চরিত্রে যা রোপিত হবে, ভবিষ্যতের সমাজে তা-ই বিকশিত হবে। শিশুকাল হলো এমন এক বয়স, যখন মন নির্মল, কল্পনা সীমাহীন, এবং হৃদয় অনুকরণের জন্য উদ্গ্রীব। এই সময়েই তার মানসিক ও নৈতিক গঠনের ভিত তৈরি হয়। একটি শিশুর নৈতিকতা গঠনের প্রথম শিক্ষক তার মা-বাবা। পরিবার হলো নৈতিক শিক্ষার প্রথম বিদ্যালয়, আর মা-বাবা হলো সেই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। শিশুর প্রথম শেখা হয় দেখা ও শোনা থেকে। সে যা দেখে, তা-ই অনুকরণ করে। তাই বলা হয়, বাবা-মা যেমন, সন্তানও তেমন। যদি পরিবারের পরিবেশ সৎ, শান্তিপূর্ণ ও মূল্যবোধে সমৃদ্ধ হয়, তবে শিশুটির নৈতিক ভিত্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে শক্ত হয়। কিন্তু যদি পরিবারে কলহ, প্রতারণা, মিথ্যাচার বা অসদাচার দেখা যায়, তবে শিশুর অন্তরে সেই অনৈতিকতার বীজ বপন হয়। শিশুকে নৈতিকভাবে গড়ে তুলতে হলে বাবা-মাকে নিজেদের আচরণে হতে হবে অনুকরণীয়, হতে হবে চরিত্রবান, বিনয়ী ও দায়িত্বশীল। সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলে বাবা-মাকেই আগে হতে হবে ভালো মানুষ। শিশুর সামনে যদি তারা পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ করেন, অন্যকে সম্মান দেন, দরিদ্রের পাশে দাঁড়ান, সৎভাবে কাজ করেন, তাহলে শিশুর মনে সেই আচরণই প্রতিফলিত হয়। ছোট ছোট কাজ-যেমন অন্যকে ধন্যবাদ জানানো, মিথ্যা না বলা, সবার সঙ্গে কোমলভাবে কথা বলা, পশু-পাখিকে ভালোবাসা-এসবই তার মনের গভীরে নৈতিকতার বীজ বপন করে। কিন্তু যদি শিশুর সামনে তার মা-বাবা পরস্পরের প্রতি রূঢ় আচরণ করেন, অন্যের সম্পর্কে কুৎসা রটান, অন্যের ক্ষতি করতে আনন্দ পান, তবে শিশুর মন সেই নেতিবাচক আচরণকেই শেখে। তাই বলা যায়, নৈতিক শিক্ষার সূচনা হয় পরিবার থেকে, এবং সেই শিক্ষা অনুশাসনে নয়, আচরণে নিহিত। পরিবারের পর শিশুর দ্বিতীয় নৈতিক বিদ্যালয় হলো স্কুল বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষালয় শুধু পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান দেওয়ার জায়গা নয়, এটি হলো চরিত্র গঠনের ক্ষেত্র। একজন শিক্ষক কেবল পাঠদাতা নন, তিনি সমাজগঠনের কারিগর। তার কথাবার্তা, পোশাক, আচার-আচরণ, ব্যবহার-সবই শিশুর মনে গভীর প্রভাব ফেলে। শিশুরা অনুকরণের মাধ্যমে শেখে, তাই শিক্ষক যেভাবে কথা বলেন, যেভাবে মিশেন, যেভাবে সমস্যা মোকাবিলা করেন-সবকিছুই শিশু পর্যবেক্ষণ করে। যদি শিক্ষক শালীন, দায়িত্বশীল, সময়নিষ্ঠ, সৎ ও সহনশীল হন, তবে শিক্ষার্থীরাও সেই গুণাবলিগুলো আত্মস্থ করে। কিন্তু যদি শিক্ষক রূঢ়, অন্যায়পরায়ণ, বা পক্ষপাতদুষ্ট হন, তবে শিশুর মনে শৃঙ্খলার বদলে ভয়, শ্রদ্ধার বদলে ঘৃণা জন্ম নেয়। ফলে নৈতিক শিক্ষা তখন আর শেখার মতো নয়, চাপের মতো হয়ে যায়। তাই একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে হতে হবে এমন পরিবেশ, যেখানে শিশুরা আনন্দের মধ্য দিয়ে সততা, সহানুভূতি ও শৃঙ্খলার মূল্য শিখতে পারে। নৈতিক শিক্ষাকে শুধু পাঠ্যবইয়ের একটি অধ্যায় হিসেবে নয়, বরং জীবনের প্রতিটি অনুষঙ্গের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। শিক্ষক যদি ভালো আচরণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে উদ্বুদ্ধ করেন, তবে শিশুটি সেই শিক্ষা কখনো ভুলে না।
যে জায়গায় শিশুর নৈতিকতা গড়ে ওঠে, সেটি হলো সমাজ। পরিবার ও স্কুলের সীমার বাইরে এসে শিশুটি যখন সমাজের সঙ্গে মিশতে শুরু করে, তখন তার সামনে উন্মুক্ত হয় এক বৃহত্তর বাস্তবতা। সমাজের আচরণ, মানুষের চলাফেরা, প্রতিবেশীর মনোভাব-সবকিছুই তার মানস গঠনে প্রভাব ফেলে। সমাজে ভালো-মন্দ দুই-ই আছে। সমাজে যেমন সৎ মানুষ আছে, তেমনি আছে মিথ্যাবাদী; যেমন সহৃদয় মানুষ আছে, তেমনি আছে নিষ্ঠুর মানুষ। শিশুরা যাদের কাছ থেকে বেশি প্রভাব গ্রহণ করে, তাদের মতোই গড়ে ওঠে। তাই বাবা-মাকে সচেতন হতে হবে, সন্তান কার সঙ্গে সময় কাটাচ্ছে, কোন পরিবেশে বেড়ে উঠছে। একটি শিশুর চরিত্র নির্ধারণ হয় তার চারপাশের পরিবেশ দ্বারা। যদি সমাজের পরিবেশ হয় সহিংস, অশান্ত ও অসদাচারে ভরা, তবে সেখানে শিশুদের নৈতিক বিকাশ অসম্ভব। বরং তাদের মনে জন্ম নেয় ভয়, অবিশ্বাস, প্রতিহিংসা ও স্বার্থপরতা। এজন্য সমাজকে হতে হবে শিশুবান্ধব, নৈতিকভাবে সুরক্ষিত ও সহিষ্ণু। শিশুরা যাতে নৈতিক আচরণ শিখতে পারে, সে জন্য সমাজে থাকতে হবে ইতিবাচক উদাহরণ, সৎ মানুষের প্রভাব, এবং নৈতিকতার প্রতি শ্রদ্ধা। যেহেতু সমাজকে পুরোপুরি শিশুবান্ধব করা সবসময় সম্ভব হয় না, তাই প্রয়োজন শিশু সংগঠন-যেখানে তারা দলগতভাবে ভালো কাজ শেখে, সমাজসেবায় অংশ নেয়, সহানুভূতি, দায়িত্ববোধ ও সহযোগিতার গুণ অর্জন করে। শিশুসংগঠন বা কিশোর ক্লাবগুলো যদি সৎ, নীতিবান ও পরোপকারী মানুষ দ্বারা পরিচালিত হয়, তবে সেখান থেকে শিশুরা অনুপ্রেরণা পায়। তারা শেখে কীভাবে নেতৃত্ব দিতে হয়, কীভাবে অন্যের সঙ্গে মিলে কাজ করতে হয়, কীভাবে সমাজের জন্য কিছু করা যায়। খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিতর্ক, গল্প বলা, সমাজসেবা-এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশুরা কেবল বিনোদিতই হয় না, তারা নিজেদের মধ্যে নৈতিক শক্তি অর্জন করে। তাই রাষ্ট্রীয়ভাবে শিশু সংগঠনগুলোকে সহায়তা করা, উৎসাহ দেওয়া এবং তাদের কার্যক্রমকে বিস্তৃত করা প্রয়োজন। বর্তমান যুগ প্রযুক্তিনির্ভর। শিশুরা আজ ডিজিটাল জগতে বড়ো হচ্ছে। মোবাইল, ইন্টারনেট, টেলিভিশন-এসব মাধ্যম এখন শিশুর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই প্রযুক্তি একদিকে জ্ঞানের দরজা খুলে দিয়েছে, অন্যদিকে তৈরি করেছে এক নৈতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা। শিশুরা এখন সহজেই এমন সব কনটেন্টের নাগাল পাচ্ছে যা তাদের বয়সের জন্য অনুপযুক্ত-সহিংসতা, অশ্লীলতা, মিথ্যা সাফল্যের গল্প ইত্যাদি। এসব শিশুর মনকে বিকৃত করে, তাকে বাস্তবতা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। তাই প্রযুক্তিকে কেবল সীমাবদ্ধতায় নয়, বুদ্ধিমত্তায় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শিশুকে প্রযুক্তি ব্যবহার শেখাতে হবে সচেতনভাবে। তাদের জন্য তৈরি করতে হবে এমন কনটেন্ট যা শিক্ষা, নৈতিকতা ও মানবিকতার আলো ছড়ায়। কার্টুন, ভিডিও, গেম-সবকিছুর মধ্যে যদি সৃজনশীলতা ও নৈতিক বার্তা সংযোজন করা যায়, তবে প্রযুক্তি হয়ে উঠবে শিশুর বন্ধু, শত্রু নয়। বাবা-মা ও শিক্ষককে প্রযুক্তি ব্যবহারের নির্দেশক হতে হবে, নিষেধক নয়।
গণমাধ্যমের ভূমিকা এখানেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টেলিভিশন, সংবাদপত্র, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম-সবই সমাজের আয়না। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের গণমাধ্যমের বড়ো অংশই শিশুদের উপযোগী নয়। খবরের পর্দা জুড়ে থাকে সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড, রাজনীতির কদর্যতা, অশ্লীল বিনোদন-যা শিশুর মনের ওপর ভয়ানক প্রভাব ফেলে। শিশু যখন প্রতিদিন টেলিভিশনে বা ইউটিউবে এসব দেখে, তার মনে ভয়, ক্ষোভ ও অসংবেদনশীলতা তৈরি হয়। সে বুঝে ফেলে, সমাজে শক্তি মানে হিংসা, সাফল্য মানে প্রতারণা। এভাবেই তার নৈতিক মানসিকতা ধীরে ধীরে বিকৃত হতে থাকে। তাই গণমাধ্যমকে শিশুদের উপযোগী নীতিমালা অনুসারে চলতে হবে। শিশুদের জন্য আলাদা অনুষ্ঠান, গল্প, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও নৈতিকতার চর্চা বাড়াতে হবে। গণমাধ্যমের দায়িত্ব শুধু খবর প্রচার নয়, ভবিষ্যৎ নাগরিক তৈরিতেও তাৎপর্যপূর্ণ। নৈতিকতার এক অদৃশ্য কিন্তু শক্তিশালী উৎস হলো ধর্ম। ধর্ম মানুষের অন্তরে জাগিয়ে তোলে সত্য, ন্যায়, দয়া ও পরোপকারের চেতনা। প্রতিটি ধর্মেই নৈতিকতার শিক্ষা নিহিত-কাউকে কষ্ট না দেওয়া, অন্যের প্রাপ্য কেড়ে না নেওয়া, মিথ্যা না বলা, দুর্বলকে সাহায্য করা, এবং নিজেকে শুদ্ধ রাখা। তাই শিশুকে তার নিজ ধর্মের নৈতিক পাঠ সহজ ভাষায় শেখাতে হবে, ভয় দিয়ে নয়, ভালোবাসা দিয়ে। ধর্মীয় নৈতিকতা মানে অন্ধ আনুগত্য নয়, বরং আত্মশুদ্ধি। শিশুকে বোঝাতে হবে, ধর্ম মানে মানবিকতা, ধর্ম মানে ভালোবাসা, ধর্ম মানে ন্যায়পরায়ণতা। ধর্মচর্চার মাধ্যমে শিশুর ভেতরে জন্ম নেয় আত্মসংযম, শ্রদ্ধাবোধ, কৃতজ্ঞতা ও সহানুভূতি-যা নৈতিকতার মূল ভিত্তি। কিন্তু সমাজে আজ নৈতিক অবক্ষয় ভয়ানক হারে বাড়ছে। কিশোর গ্যাং, মাদক, সহিংসতা, পর্নোগ্রাফি, অশ্লীল সংস্কৃতি-সবকিছুই শিশুদের মনে নৈতিক শূন্যতা তৈরি করছে। তারা এখন আগের চেয়ে বেশি তথ্য জানে, কিন্তু কম মূল্যবোধ বোঝে; বেশি প্রযুক্তি জানে, কিন্তু কম সহানুভূতি রাখে। এই অবস্থায় রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার-সবাইকে একসঙ্গে দায়িত্ব নিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নৈতিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে, শুধু পরীক্ষার বিষয় হিসেবে নয়, বরং বাস্তব জীবনের অনুশীলন হিসেবে। স্কুলে নৈতিক আচরণের পুরস্কার, সহানুভূতির প্রতিযোগিতা, সমাজসেবার ক্লাব তৈরি করতে হবে। গণমাধ্যমে শিশুদের জন্য ইতিবাচক সংবাদ প্রচার করতে হবে, অপরাধ নয়। বাবা-মাকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে কীভাবে সন্তানের সঙ্গে কথা বলতে হয়, কীভাবে তাকে মানসিকভাবে নিরাপদ রাখা যায়। পরিবারে কলহ, সহিংসতা বা দুর্নীতি থেকে শিশুকে দূরে রাখতে হবে। যদি কোনো শিশু পরিবারে অন্যায় দেখেও তা জানাতে না পারে, তবে তার মনে জমে যায় ভয় ও বিভ্রান্তি। তাই শিশুদের শেখাতে হবে-যে কোনো অনৈতিক আচরণের বিরুদ্ধে সে কথা বলতে পারে, শিক্ষককে, সংগঠনকে বা প্রশাসনকে জানাতে পারে। সামাজিক সংগঠন, স্কুল ও স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে হতে হবে সমন্বয়, যাতে শিশু নিরাপদ ও নৈতিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে। প্রযুক্তি ও বিনোদনের জগতে যে ভয়ানক প্রতিযোগিতা চলছে-ভিউ, লাইক, ক্লিকের লড়াই-তার মধ্যে শিশুরা যেন হারিয়ে না যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে থাকতে হবে নৈতিকতার ফিল্টার, শিশুর মানসিক বিকাশের উপযোগী নীতি। নৈতিকতার মূল আসলেই এক-সত্য, সততা, মানবিকতা। এই তিনটি গুণ যার মধ্যে আছে, সে ধর্ম, জাতি বা ভাষা নির্বিশেষে একজন মহৎ মানুষ। শিশুকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যেন সে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, প্রকৃতির প্রতি মমতাশীল, নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হয়। নৈতিকতা কখনো মুখস্থ পাঠ নয়, এটি অনুশীলন ও অভ্যাসের ফল। যেমন প্রতিদিন সকালে সূর্য ওঠে, তেমনি প্রতিদিনের আচরণের মধ্য দিয়ে নৈতিকতাও জন্ম নেয়। আজ যদি আমরা শিশুদের মধ্যে সেই আলো না জ্বালাতে পারি, তবে আগামী দিনের সমাজ হবে প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ কিন্তু মানবিকতায় শূন্য। আমরা গড়ব যন্ত্রমানব, মানুষ নয়। তাই এখনই সময় পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও গণমাধ্যমের সমন্বয়ে এমন এক পরিবেশ তৈরি করার, যেখানে শিশুরা ভয় নয়, ভালোবাসা থেকে নৈতিকতা শিখবে; শাস্তি নয়, প্রেরণা থেকে সততা অর্জন করবে। আমাদের প্রত্যেককেই হতে হবে নৈতিকতার প্রদীপ-কারণ শিশুরা আলো খোঁজে, নির্দেশ নয়।
আজকের শিশু আগামী দিনের রাষ্ট্রনেতা, শিক্ষক, বিজ্ঞানী, কবি, শ্রমিক, কৃষক-তাদের মধ্যে যদি নৈতিকতার বীজ আজই রোপণ না করা যায়, তবে ভবিষ্যৎ সমাজ এক নৈতিক মরুভূমিতে পরিণত হবে। তাই আজ প্রয়োজন প্রত্যেক পরিবারে নৈতিকতার পাঠশালা, প্রত্যেক বিদ্যালয়ে মানবিকতার ক্লাস, প্রত্যেক গণমাধ্যমে শিশুবান্ধব চেতনা, এবং প্রত্যেক মানুষের হৃদয়ে একটিমাত্র বিশ্বাস-নৈতিকতা ছাড়া কোনো সভ্যতা টিকে না। শিশুকে সৎ হতে শেখানো মানে তাকে শুধু ভালো মানুষ বানানো নয়, বরং তাকে সত্যের সৈনিক বানানো। সেই সত্যের যাত্রাই আমাদের ভবিষ্যৎ সমাজের মুক্তির পথ। আমরা যদি চাই আগামী পৃথিবী হোক আলোকিত, শান্তিপূর্ণ ও মানবিক, তবে এখনই শুরু করতে হবে শিশুর নৈতিকতা গঠনের কাজ। কারণ একটি শিশুর হৃদয়ে যত আলো জ্বলে, ততই আলোকিত হয় গোটা মানবসমাজ।
লেখক: মো: শামীম মিয়া; কলামিস্ট