অগ্রণী ব্যাংকের বিশাল অঙ্কের ঋণ জালিয়াতি মামলায় ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ সাব্বির ফয়েজ। বুধবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে দুদকের আবেদনের ভিত্তিতে এই আদেশ দেওয়া হয়।
সকালে ধানমন্ডির বাসা থেকে পুলিশের সহায়তায় তাকে আটক করে দুর্নীতি দমন কমিশন। পরে বিকালে আদালতে হাজির করা হলে দুদকের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহ জালাল তাকে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন। শুনানিতে আসামিপক্ষে কোনো জামিন আবেদন ছিল না। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। প্রসিকিউটর খন্দকার মশিউর রহমান জানান, অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনায় আদালত তাৎক্ষণিকভাবে আটকাদেশ দেন।
এই মামলার পটভূমিতে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংকের চট্টগ্রামের আছাদগঞ্জ শাখা। দুদক জানায়, ছোলা এবং গম আমদানির জন্য মেসার্স মিজান ট্রেডার্স নামের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যে ঋণ অনুমোদিত করা হয়েছিল, সেটির প্রকৃত সুবিধাভোগী ছিল নুরজাহান গ্রুপ এবং তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান জাসমীর ভেজিটেবল ওয়েল লিমিটেড। বেতনভোগী কর্মচারী মিজানুর রহমানকে ব্যবহার করে তারা ঋণ অনুমোদন এবং উত্তোলনের পুরো প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করেছিল।
তদন্তে উঠে এসেছে, নুরজাহান গ্রুপের একটি বেনামি প্রতিষ্ঠানের নামে হিসাব খোলা হয় এবং সেই হিসাব পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় জাসমীর ভেজিটেবল ওয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদকে। নতুন প্রতিষ্ঠানকে বিপুল অঙ্কের ঋণ অনুমোদন করা হয়। পরে শর্ত পরিপালন নিশ্চিত না করেই সুপরিকল্পিতভাবে ব্যাংকের ৫১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়, যা সুদে আসলে এখন দাঁড়িয়েছে ১৮৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর এই ঘটনার অভিযোগে দুদক মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে। আসামিদের মধ্যে আছেন অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক এমডি ও সিইও সৈয়দ আব্দুল হামিদ, আছাদগঞ্জ শাখার সাবেক প্রিন্সিপাল অফিসার মোস্তাক আহমেদ, সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক আবুল হোসেন তালুকদার, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শামস উল ইসলাম, তাজরীনা ফেরদৌসী এবং মোফাজ্জল হোসেন। পাশাপাশি নুরজাহান গ্রুপের চার পরিচালক মিজানুর রহমান, জহির আহমেদ, টিপু সুলতান এবং ফরহাদ মনোয়ারকেও আসামি করা হয়েছে।
ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ দীর্ঘদিন ব্যাংকিং খাতে দায়িত্ব পালন করেছেন। ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে তিনি ২০২৫ সালের ১৬ জুলাই পদত্যাগ করেন। এর আগে তিনি সোনালী ব্যাংক এবং রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। আরও আগে অগ্রণী ব্যাংকের ঢাকা সার্কেল ২ এর মহাব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট তার বিরুদ্ধে দায়িত্বকালীন অনিয়ম এবং আর্থিক অসঙ্গতির অভিযোগ নিয়ে একটি প্রতিবেদন দুদকে পাঠায়। সেই প্রতিবেদন পর্যালোচনার পরই তদন্তের গতি বাড়ানো হয়।
দুদক বলছে, এই মামলার নথিতে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক থেকে সুপরিকল্পিতভাবে বড় অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে। তদন্ত কর্মকর্তার ভাষায়, “ঋণ অনুমোদন থেকে উত্তোলন পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াতেই ছিল অসংখ্য অনিয়ম, যা ইচ্ছাকৃত প্রতারণা ছাড়া সম্ভব নয়।”
মামলার পরবর্তী কার্যক্রম নির্ধারণ করবে আদালত। তবে গ্রেপ্তার এবং আটকাদেশে মামলার তদন্তে গতি আসবে বলে মনে করছে দুদক।