শিক্ষার্থীদের নদী পারাপারে নৌকা উপহার; মানবিক উদ্যোগে সুবিধাভোগী শতশত মানুষ

মো: হেলাল উদ্দীন; বাগমারা, রাজশাহী
| আপডেট: ১৯ নভেম্বর, ২০২৫, ০৭:৩২ পিএম | প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর, ২০২৫, ০৬:২৬ পিএম
শিক্ষার্থীদের নদী পারাপারে নৌকা উপহার; মানবিক উদ্যোগে সুবিধাভোগী শতশত মানুষ
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়নের ২১৫ নং বীরকয়া ত্রিমোহনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের দুর্ভোগ কমাতে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন উপজেলা প্রশাসন। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষিকা তাহমিনা খাতুনের উদ্যোগে, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের সহযোগিতায় এবং বাগমারার সুযোগ্য ও মানবিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মাহবুবুল ইসলামের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের উপজেলা উন্নয়ন প্রকল্প (ইউডিপি) থেকে ৭০,০০০ টাকা বরাদ্দ দিয়ে একটি নৌকা উপহার দেওয়া হয়। গত ২১ অক্টোবর, ২০২৫ ইং আনুষ্ঠানিকভাবে নৌকাটি হস্তান্তর করা হয় উপজেলা প্রকৌশলীর মাধ্যমে। বুধবার (১৯ নভেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের প্রায় ৫০–৬০ জন শিক্ষার্থী প্রতিদিন এই নৌকা যোগে নিরাপদে নদী পারাপার হয়ে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসছে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বীরকয়া, লাউবাড়ীয়া ও কাস্টনাংলা— তিন গ্রামের শতশত মানুষও প্রতিদিন রাণী নদী পারাপারে উপকৃত হচ্ছেন। সরকারি ব্রিজ না থাকায় এবং বিদ্যালয়ে যাতায়াতের রাস্তা কাঁচা থাকার কারণে এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বর্ষা মৌসুমে বিদ্যালয়ের আঙিনায় পানি জমে জনদুর্ভোগ আরও বেড়ে যায় বলেও জানান শিক্ষার্থীরা। তবে নৌকা উপহার দেওয়ার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ মানুষ উপজেলা প্রশাসনের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তাঁরা জানান, নৌকাটি পাওয়ায় শিক্ষা, কৃষি ও নিত্যদিনের চলাচল এখন আগের তুলনায় অনেক সহজ হয়েছে। দীর্ঘদিন পরে হলেও এই উদ্যোগ তাদের জীবনমান উন্নয়ন ও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিশ্চিন্তে পারাপারে এই উদ্যোগ এলাকাবাসীর মাঝে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। তবে দুঃখজনক হলেও বাস্তবতা হলো, এই স্বেচ্ছাসেবী নৌকাচালক—মানবিকতার আরেক উদাহরণ, এই নৌকা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন প্রায় ৮০ উর্ধ্ব এক বৃদ্ধ ব্যক্তি। কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই তিনি দিন-রাত পরিশ্রম করে স্বেচ্ছায় পারাপারের কাজটি করে আসছেন। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে মানুষের সুবিধার জন্য তার এ আত্মত্যাগ এলাকায় প্রশংসিত হলেও তাকে এখনো কোনো নিয়মিত আর্থিক সম্মানী দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। জানা গেছে, বছর শুরুর জৈষ্ঠ্য মাসে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিছু ধান সংগ্রহ করাই তার একমাত্র পারিশ্রমিক। নগদ কোনো অর্থ তিনি পান না। পারাপারের সুবিধাভোগী এবং ঐ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অভিভাবক, লাউবাড়ীয়া গ্রামের শুকুর আলী, মোসলেম আলী ও আমজাদ হোসেনের সাথে কথা হলে তাঁরা জানান, এই নৌকাটি শুধু একটি পরিবহন নয়—এটি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক ও উন্নয়নমূলক প্রশাসনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। একই সঙ্গে নদী পারাপারে নিযুক্ত বৃদ্ধ ব্যক্তিটির নিয়মিত সম্মানীর ব্যবস্থা এবং ভবিষ্যতে ব্রিজ এবং বিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য পাকা রাস্তা নির্মাণের জোরালো দাবি জানাচ্ছি। এব্যাপারে বাসুপাড়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন বলেন, নৌকাটি পেয়ে ছোট ছোট বাচ্চারাসহ সাধারণ মানুষ অনেক উপকৃত হয়েছে। সেজন্য উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই এবং স্থায়ী সমাধানের জন্য একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, পারাপারের জন্য নৌকাটি পেয়ে শিক্ষার্থীদের অনেক উপকার হয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যালয়ে যাতায়াতের কাঁচা রাস্তাটি পাকাকরণ হলে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ আরো কমত। এরকম মানবিক কাজের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের যাতায়াতকে সহজ করতে এবং স্কুলে যেতে যাতে সমস্যা না হয় সেজন্য আমরা একটি বোট (নৌকা) দিয়েছি। রাস্তা এবং ব্রিজ নির্মাণের ব্যাপারে আমরা সামনের মিটিং এ আলোচনা করবো। যদি আমাদের বরাদ্দ দিয়ে করা যায় করবো, না হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পত্রের মাধ্যমে বিষয়টি অবহিত করবো। আর পাটনি (পারাপারকারী) আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে তাঁকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবো।
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে