দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি জরুরি

এফএনএস | প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর, ২০২৫, ০৬:৪৩ পিএম
দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি জরুরি

দেশে প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ তরুণ কর্মবাজারে প্রবেশযোগ্যতা লাভ করে। তাদের মধ্যে অনেকেই কাজ পায় না, অনেকে পেলেও যথাযোগ্য কাজটি পায় না কিংবা অনেকেই কাঙ্ক্ষিত পারিশ্রমিক পায় না। বিনিয়োগ-কর্মসংস্থান আর দারিদ্র্য বিমোচন যেহেতু একই সূত্রে গাঁথা, তাই এখানে অব্যাহত বিনিয়োগও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে, বিশেষত ব্যাবসা-বাণিজ্যে নানা সংকট চলছে। ডলার সংকট ও এর মূল্যবৃদ্ধির কারণে ব্যবসায়ীদের ওপর আর্থিক চাপ বেড়েছে। উল্লেখযোগ্য হারে ঋণ ও বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি হয়নি। বিদেশি বিনিয়োগও খুব বেশি বাড়েনি। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কর্মসংস্থানের ওপর, সেভাবে নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে না। যদিও প্রতি বছর কর্মক্ষম বিপুলসংখ্যক মানুষ চাকরির বাজারে যুক্ত হলেও তাদের একটি বড়ো অংশই কাজ না পেয়ে বেকার থাকছে। আরেকদিকে ছদ্ম বেকারত্ব বাংলাদেশের শ্রমবাজারে অন্যতম সমস্যা, যা দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর একটি দুর্বল দিককে তুলে ধরে। এটি এমন এক ধরনের বেকারত্ব, যেখানে ব্যক্তি কোনো না কোনো কাজে নিয়োজিত থাকলেও তার শ্রম বা দক্ষতা প্রকৃত উৎপাদনে তেমন অবদান রাখে না। দেশের উচ্চশিক্ষিত তরুণদের বড়ো একটি অংশ চাকরির অভাবে বা কাঙ্ক্ষিত চাকরি না পাওয়ায় তাদের যোগ্যতার তুলনায় অনেক নিচু স্তরের পেশায় নিযুক্ত হচ্ছেন। এতে তাদের দক্ষতা ও উৎপাদন ক্ষমতার অপচয় ঘটছে, যা ছদ্ম বেকারত্বের আরেকটি রূপ। ফলে তারা বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে কর্মরত হয়েও কার্যত কর্মহীন অবস্থায় রয়েছে। এভাবে ছদ্ম বেকারত্ব বাংলাদেশের শ্রমশক্তির অপচয় ঘটাচ্ছে, যা দেশের সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এর মূল কারণ হচ্ছে ব্যাবসা বাণিজ্য চরম সংকটের দিকে যাচ্ছে। ব্যবসায় নতুন বিনিয়োগ নেই, পুরোনো ব্যাবসাই চলছে। যা চলছে, সেটাও আরো কমছে। আর নতুন ব্যাবসা তো সম্ভবই না। কারণ মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি। গ্যাসসহ সবকিছুই উচ্চমূল্যের। নিয়ম হলো যে উৎপাদনশীল খাতে সহযোগিতা করার জন্য সরকারের সবসময় একটা নীতি থাকে। এবার সবকিছু নেতিবাচক হওয়ার কারণে কেউ আর এ পথে এগোচ্ছে না। ফলে ব্যাবসা বাড়ছে না। নতুন ব্যবসায়ও বিনিয়োগ হচ্ছে না। এটা দারিদ্র্য বিমোচনের পথে একটি সাংঘাতিক চ্যালেঞ্জ। দেশে মূল্যস্ফীতির হার এখন গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিল্প-ব্যাবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভালো কিছু আশা করলেও তাঁরা এখন চূড়ান্ত হতাশা প্রকাশ করছেন। এক বছর পরও শান্তি, স্বস্তি কিংবা আস্থা কোনোটিই ফেরেনি, বরং ক্রমেই বাড়ছে সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা। বিনিয়োগে স্থবিরতা চলছে। দেশি বা বিদেশি কোনো উদ্যোগেই ভালো সাড়া নেই। এ জন্য বিদ্যুৎ-জ্বালানির সংকট, ঋণের উচ্চ সুদের হার, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ অন্যান্য কারণ তো আছেই, সেই সঙ্গে আছে পরিকল্পিত হয়রানি। তাই রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা, দুর্বল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির মাধ্যমে বিনিয়োগের জন্য আস্থার পরিবেশ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি।