বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মিলনমেলা

২০ নভেম্বর সাতক্ষীরার শ্যামনগর-কালীগঞ্জ-দেবহাটা মুক্ত দিবস

এফএনএস (এস.এম. শহিদুল ইসলাম; সাতক্ষীরা) : | প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর, ২০২৫, ০৭:০০ পিএম
২০ নভেম্বর সাতক্ষীরার শ্যামনগর-কালীগঞ্জ-দেবহাটা মুক্ত দিবস

২০ নভেম্বর ২০২৫ বৃহস্পতিবার,শ্যামনগর-কালীগঞ্জ-দেবহাটা মুক্ত দিবস। দিবসটি উপলক্ষে   সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলা মাঠে অনুষ্ঠিত হবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মিলনমেলা। অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবার, স্থানীয় প্রশাসন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করবেন। দিনটি স্মরণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, স্মরণসভা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হবে।

অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল ডা. মোঃ শাহ জাহান (অব.)

বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজ আলম বেগ (অব.), কমান্ডার, সেক্টর স্পেশাল ফোর্স, ৯নং সেক্টর,

বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর মোঃ আহসান উল্লাহ (অব.), কোম্পানি কমান্ডার, ৯নং সেক্টর, বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্ণেল এম.এস.এ.কে আজাদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল্লাহ হিল সাফি, কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল সদস্য

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ শহিদুল ইসলাম, আহবায়ক, সাতক্ষীরা জেলা ইউনিট কমান্ড,

অনুজা মণ্ডল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কালীগঞ্জ, সাতক্ষীরা, মোঃ মিজানুর রহমান, অফিসার ইনচার্জ, কালীগঞ্জ থানা, সাতক্ষীরা। 

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করবেন ক্যাপ্টেন এম নূরুল হুদা (অব.), ৯নং সেক্টরের সহ-অধিনায়ক ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সদস্য।

মিলনমেলার আয়োজন করেছে কালীগঞ্জ উপজেলা কমান্ড, সাতক্ষীরা।

১৯৭১ সালে ৯নং সেক্টরের সহ-অধিনায়ক হিসেবে ক্যাপ্টেন এম নূরুল হুদা কালীগঞ্জ ও দেবহাটা অঞ্চলে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা ও সম্মুখযুদ্ধ পরিচালনা করেন। তার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা বসন্তপুর, নাজিমগঞ্জ, কালীগঞ্জ ও পারুলিয়া এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের বাধ্যতামূলক পশ্চাৎপদ নিশ্চিত করেন। কালীগঞ্জে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন এবং প্রথম ডাকটিকিট প্রকাশের সাফল্যও তার নেতৃত্বে সম্ভব হয়।

এদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজ আলম বেগ (অব.) ছিলেন সেক্টর স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডার। তিনি দেবহাটায় ডিনামাইটের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ ভেঙে পাকসেনাদের চোখ ফাঁকি দেন এবং অন্ধকারে নিরাপদে অভিযান চালিয়ে হানাদারদের ব্যাপক ক্ষতি করেন। তার সাহসিকতা ও কৌশলগত নেতৃত্ব স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস ও আত্মবিশ্বাস জোগায়।

১৯৭১ সালের ১৯-২৩ নভেম্বরের মধ্যে শ্যামনগর, কালীগঞ্জ, দেবহাটা, ভোমরা ও কুলিয়া অঞ্চল পাক হানাদার মুক্ত হয়। দীর্ঘ নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা সাতক্ষীরা শহর ও সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলো মুক্ত করেন। পাকসেনারা পালিয়ে যাওয়ার পর ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নিরাপদ ঘাঁটি তৈরি করে মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তাঞ্চল নিয়ন্ত্রণে রাখেন।

শহরের কেন্দ্রস্থলে ট্যাংকবিধ্বংসী মাইন স্থাপন, গুপ্ত হামলা এবং সঠিক সময় ব্রিজ ধ্বংস করে পাকসেনাদের দমনমূলক কার্যক্রম ব্যর্থ হয়। ফলে ভারতীয় মিত্রবাহিনী বাংলাদেশে ঢোকার পূর্বেই সাতক্ষীরা শহর ও সীমান্তবর্তী অঞ্চল পাকসেনা মুক্ত হয়। ৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালকে স্থানীয়ভাবে সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়।

মিলনমেলায় মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের ত্যাগের গল্প, অভিজ্ঞতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করবেন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে এলাকার নতুন প্রজন্ম স্বাধীনতার মর্যাদা, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ সম্পর্কে জানার সুযোগ পায়।

মুক্তিযুদ্ধের ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও সাতক্ষীরার বধ্যভূমি ও স্মৃতিসৌধগুলো সংরক্ষণ ও সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছেন স্থানীয়রা।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে