রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে শিক্ষক নিয়োগে কোটা নয়, মেধাকে প্রাধান্য দেওয়ার দাবিতে জেলায় ৩৬ ঘণ্টার হরতাল চলছে। বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) সকাল ছয়টা থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি চলবে শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। হরতালের কারণে শহরজুড়ে যান চলাচল বন্ধ, দোকানপাট বন্ধ এবং নৌ ও সড়ক যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
হরতালের পটভূমিতে রয়েছে জেলা পরিষদের নিয়োগপ্রক্রিয়ায় কোটা বৈষম্যের অভিযোগ। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, সরকারি নীতিমালায় ৯৩ শতাংশ মেধা ও ৭ শতাংশ কোটার কথা বলা থাকলেও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ৭০ শতাংশ পাহাড়ি ও ৩০ শতাংশ বাঙালি কোটা ধরে নিয়োগ দিতে চাইছে। সংগঠনগুলো বলছে, এতে মেধাবী প্রার্থীরা বঞ্চিত হবেন এবং স্থানীয় বাঙালি চাকরিপ্রত্যাশীরা বৈষম্যের শিকার হবেন।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে শহরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে কোটা বিরোধী ঐক্যজোট, সাধারণ শিক্ষার্থী এবং সচেতন নাগরিকবৃন্দ এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন। তাদের ভাষ্য, শান্তিপূর্ণভাবে দাবি জানানো হলেও কোনো সমাধান আসেনি। তাই বাধ্য হয়ে হরতালের ডাক দেওয়া হয়েছে। একই ইস্যুতে আরো কয়েকটি বাঙালি সংগঠনও সংহতি জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শহরের রিজার্ভ বাজার, বনরূপা, তবলছড়ি, দোয়েল চত্বরসহ বেশ কয়েকটি স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে এবং সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে পিকেটিং করেন আন্দোলনকারীরা। এতে রাঙামাটি থেকে চট্টগ্রাম ও ঢাকাগামী দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকে। শহরের অভ্যন্তরীণ সড়কেও সিএনজি অটোরিকশা চলে না। নৌপথেও লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় অফিসগামী মানুষ এবং স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
হরতালের সমর্থনে দোয়েল চত্বরে অবস্থান নেওয়া রিয়াজুল দেওয়ান বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালন করছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী আর স্কুলের শিক্ষার্থীরা হরতালের আওতার বাইরে থাকবে।” ইমাম হোসেন ইমুও অভিযোগ করেন, “জেলা পরিষদ যে ৭০ শতাংশ পাহাড়ি ও ৩০ শতাংশ বাঙালি কোটা প্রয়োগ করতে চাইছে তা চরম বৈষম্যমূলক।”
অন্যদিকে জরুরি সেবা, যেমন হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস ও ওষুধের দোকান খোলা রয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ সাহেদ উদ্দিন জানান, পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে আছে।
এই হরতালের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা, যা শুক্রবার, ২১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। জেলা পরিষদের অধীন প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ এই নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনা করছে। ২০২২ সালের বিজ্ঞপ্তিসহ মোট ৪৬২টি শূন্য পদের বিপরীতে দুই দফায় প্রায় সাত হাজার প্রার্থী আবেদন করেছেন। তবে কোটা নীতিমালা নিয়ে অনাস্থা ও অনিয়মের অভিযোগকে কেন্দ্র করে এই পরীক্ষা স্থগিতের দাবিও তুলেছে আন্দোলনকারী সংগঠনগুলো।
হরতাল চলমান থাকায় রাঙামাটির মানুষজনের দৈনন্দিন জীবনে দুর্ভোগ বাড়লেও আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, বৈষম্যমুক্ত নিয়োগ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা দাবিতে অনড় থাকবেন।