আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও সংখ্যালঘু বান্ধব করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা পেশ করেছে বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি)।
বিএমজেপি'র পক্ষ থেকে বুধবার (১৯ নভেম্বর) দিবাগত রাতে প্রেরিত ই-মেইল বার্তায় জানা গেছে, সংলাপে প্রথমধাপে সকাল সাড়ে দশটা থেকে বেলা সাড়ে বারোটা পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন-বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি), ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণসংহতি আন্দোলন, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) ও বাংলাদেশ লেবার পার্টির নেতৃবৃন্দরা।
দ্বিতীয় ধাপে দুপুর দুইটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত সংলাপে উপস্থিত ছিলেন-বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ রিপাবলিক পার্টি (বিআরপি) এবং বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে-সংলাপে বিএমজেপির পক্ষ থেকে বেশকিছু দাবী তুলে ধরা হয়েছে। সংগঠনের সভাপতি সুকৃতি কুমার মন্ডল জানিয়েছেন-বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের আগে ও পরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে থাকে। এমতাবস্থায়, নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত ১১টি আলোচ্যসূচিকে স্বাগত জানিয়ে বিএমজেপি'র পক্ষ থেকে নিম্নোক্ত দাবিগুলো জোড়ালোভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
দাবিগুলো হলো-কঠোর নিরাপত্তা ও সেনা মোতায়েন: নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সংখ্যালঘুদের ভয়ভীতি প্রদর্শনরোধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। বিএমজেপি দাবি জানিয়েছে, ভোটগ্রহণের সাতদিন পূর্ব থেকে নির্বাচনের ১০ দিন পর পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো প্রার্থী সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বা ভীতি প্রদর্শন করলে তাৎক্ষণিকভাবে তার প্রার্থীতা বাতিল করতে হবে।
বিএমজেপি তাদের বিশেষ প্রস্তাবে উল্লেখ করেছেন-২০০৪ সালের ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব রক্ষায় শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারী আশার আলো জাগিয়েছিলেন। তাকে মিথ্যা মামলায় বন্দি রাখা হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতে এবং সংখ্যালঘুদের আস্থা অর্জনে অনতিবিলম্বে এই ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়েছে।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এআই (অও) বা ডিপফেক ভিডিও ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর অপচেষ্টারোধে ইসির অধীনে শক্তিশালী সাইবার মনিটরিং সেল গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কোনো গুজব ছড়ালে এক ঘন্টার মধ্যে তার সত্যতা যাচাই করে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়।
প্রবাসে অবস্থানরত বিপুল সংখ্যক সংখ্যালঘু এবং দেশের ভেতরে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা ভোটারদের জন্য 'ঙঁঃ ড়ভ ঈড়ঁহঃৎু ঠড়ঃব (ঙঈঠ)' এবং 'ওহ ঈড়ঁহঃৎু চড়ংঃধষ ঠড়ঃব (ওঈচঠ)' ব্যবস্থা চালুর জোর দাবি জানানো হয়।
পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারণায় মসজিদ, মন্দির বা কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রতিপক্ষকে 'নাস্তিক' বা ' কাফের ' ইত্যাদি -এর মতো বিদ্বেষমূলক আখ্যা দিলে প্রার্থীতা অযোগ্য ঘোষণার দাবি করা হয়েছে।
এছাড়াও প্রতিটি জেলা-উপজেলায় সংখ্যালঘুদের জন্য বিশেষ সুরক্ষা সেল ও হটলাইন চালু, তিনশ' আসনের ভোটার তালিকার ডাটাবেজ রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য উন্মুক্ত করা এবং ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টগুলোর সংস্কারের দাবী জানানো হয়েছে।
বিএমজেপি'র মহাসচিব দিলীপ কুমার দাস, স্থায়ী পরিষদের সদস্য বীরেন্দ্রনাথ অধিকারী, সহ-সভাপতি আর.কে মন্ডল রবিন এবং তরুণ কুমার ঘোষ জানিয়েছেন-বিএমজেপি আশা প্রকাশ করছে একটি ভীতিমুক্ত ও সর্বজনগ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে নির্বাচন কমিশন এই প্রস্তাবনাগুলো সদয় বিবেচনা করবে।