এক রাতেই নিঃস্ব কৃষক সেলিম

এফএনএস (রুপম ভট্টাচার্য; চট্টগ্রাম) : | প্রকাশ: ২০ নভেম্বর, ২০২৫, ০৬:৫০ পিএম
এক রাতেই নিঃস্ব কৃষক সেলিম

ফটিকছড়ি পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাঘমারা মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় মধ্যরাত ৩টার দিকে দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়লো তিনটি কাটা ধানের স্তূপ। মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়া আগুনে ছাই হয়ে যায় কৃষক সেলিমের ছয় মাসের ঘামঝরা শ্রম।স্থানীয়রা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও রক্ষা করতে পারেনি কেটে রাখা ফসল। কৃষক সেলিম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি বর্গা নিয়ে জমিতে ধান চাষ করি। ছয় মাস শ্রম দিয়েছিলাম। ফসলও ভালো হয়েছিল। কিন্তু দুর্বৃত্তরা সব ছাই করে দিল। প্রায় ৫ বিঘা জমির ৩০০ আড়ি ধান ছিল পুরো মৌসুমের একমাত্র সম্বল। আমি এখন নিঃস্ব। যারা আমার এত বড় ক্ষতি করেছে, আমি তাদের শাস্তির দাবি জানাই’।সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ঘটনাটিকে ‘অমানবিক’ এবং ‘অসভ্য সমাজের আচরণ’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, মানুষের সাথে বিরোধ থাকতে পারে, কিন্তু খাদ্যশস্য পুড়িয়ে দেওয়া কোনো মানুষের কাজ হতে পারে না। যারা দায়ী তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে।পৌরসভা ছাত্রদলের আহ্বায়ক একরাম চৌধুরী বলেন, মানুষ যে কত নিকৃষ্ট হতে পারে-এটাই তার প্রমাণ। শত্রুতা থাকতে পারে, কিন্তু কারও ফসল পুড়িয়ে দেওয়া অমানবিকতার চরম দৃষ্টান্ত।ফটিকছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু ছালেক বলেন, এটা অত্যন্ত কষ্টদায়ক ঘটনা। ওই কৃষকের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে। এ নিয়ে পরপর তিনটি একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এতে কৃষকদের মাঝে ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। এসব ঘটনা পরিকল্পিত কি-না তা তদন্ত হওয়া জরুরি। ফটিকছড়ি থানার ওসি নূর আহমদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, এটা অমানবিক ও অত্যন্ত দুঃখজনক। তদন্ত করে যারা জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, ঘটনার পরই কৃষি কর্মকর্তাদের ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। যারাই এই ঘটনার সাথে জড়িত হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।পরপর তিনটি একই ধরনের ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, একটি ঘটনা শত্রুতাজনিত, আরেকটি মাদকাসক্তদের কাজ, আর শেষটির তদন্ত চলছে। মনে হচ্ছে এক ধরনের পরিকল্পিত সিন্ডিকেট সক্রিয় থাকতে পারে। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দেন।এর আগে হারুয়ালছড়ি ও দৌলতপুরে জমিতে কেটে রাখা ধান পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ধারাবাহিক এসব ঘটনায় ফটিকছড়ির কৃষকদের মাঝে এখন চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। ধান ঘরে আসার আনন্দের মৌসুম এখন গ্রাস করেছে অন্ধকার-আগুনে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে