মানসিক রোগীদের অবহেলা কাম্য নয়

এফএনএস | প্রকাশ: ২০ নভেম্বর, ২০২৫, ০৮:০২ পিএম
মানসিক রোগীদের অবহেলা কাম্য নয়

স্বাস্থ্য ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক এই তিন অবস্থার একটি সমন্বয়। একজন মানুষের স্বাস্থ্য হলো নীরোগ শরীর; সেই সঙ্গে ভয়, হতাশা, বিষণ্নতা, মানসিক চাপ থেকে মুক্তি এবং সমাজের নানাবিধ চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করতে সক্ষম মন। অর্থাৎ স্বাস্থ্যের অন্যতম উপাদান হলো মনের সুস্থতা। মানুষের চিন্তা, আবেগ ও আচরণ মিলেই মানসিক স্বাস্থ্য। যে-কোনো সময়ে একজন ব্যক্তির মানসিক সুস্থতা কেমন হবে, তার পেছনে একাধিক সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক ও জৈবিক কারণ থাকে। বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ১০ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো)। সরকার ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট পরিচালিত ২০১৮ সালের একটি জরিপ অনুযায়ী, ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে মানসিক রোগের হার ১৮ দশমিক ৭। বিশ্বে আত্মহত্যা ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ। প্রতিবন্ধিতার প্রধান কারণগুলোর একটি হলো বিষণ্নতা। মানসিক স্বাস্থ্যকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বের স্বীকৃতি। বাংলাদেশে প্রায় ১৭ কোটি মানুষের জন্য মাত্র ২৭০ জন মনোরোগ চিকিৎসক ও প্রায় ৫০০ জন মনোবিজ্ঞানী রয়েছে। বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বাস শহরাঞ্চলে। সরকারি স্বাস্থ্য বাজেটের মাত্র শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ মানসিক স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ করা হয়। বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অসংখ্য ভুল ধারণা আছে। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে একধরনের লজ্জা বা কলঙ্ক। গ্রামাঞ্চলে অনেকে রোগ নিরাময়ের জন্য হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে যায়। তাঁরা এমন সব ব্যবস্থা নেন, যা রোগীর জন্য ক্ষতিকর, অবমাননাজনক। অনেক ক্ষেত্রে তাদের অধিকারের লঙ্ঘন। গ্রাম ও শহরের বেশির ভাগ মানুষই জানে না যে শরীরের মতো মনেরও রোগ হতে পারে। অন্য যে-কোনো অসুখের মতোই মানসিক রোগ হলে চিকিৎসকের সহায়তা নিতে হবে। মানসিক রোগীদের জন্য দেশের একমাত্র বিশেষায়িত চিকিৎসালয় পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের দিন কাটছে নানা দুঃখ-দুর্দশা ও অবহেলার মাঝে। হাসপাতালটি এখন নানা সংকটে জর্জরিত। রোগীদের আধুনিক ও উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। অনেক চিকিৎসা সরঞ্জাম নষ্ট। হাসপাতাল ভবনও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এছাড়া রয়েছে জনবল সংকট এবং যানবাহনের সমস্যা। সরকারের উচিত মানসিক রোগীদের চিকিৎসার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে এসব সমস্যার দিকে দৃষ্টি দেওয়া; হাসপাতালটির সেবার মান সার্বিকভাবে উন্নত করা। মানসিক রোগীদের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। এসব রোগীকে উপহাস না করে সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখা উচিত। মানসিক রোগীর চিকিৎসা এবং চিকিৎসা-পরবর্তী সেবা যেন সঠিকভাবে হয়, সে ব্যবস্থা থাকা উচিত রাষ্ট্রে, সমাজে ও প্রতিটি পরিবারে।