ইন্টারন্যাশনাল পিস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রংপুর-এর উদ্যোগে আয়োজিত হলো ‘প্যারেন্টিং কনফারেন্স-২০২৫’। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ৯ টায় নগরীর টাউন হলে অনুষ্ঠিত এই বিশেষ সেমিনারে অংশ নেন শতাধিক অভিভাবক, শিক্ষক এবং শিক্ষাবিদ।
"শিশুর বিকাশে অভিভাবক-শিক্ষক অংশীদারিত্ব"-প্রধান থিমকে সামনে রেখে কনফারেন্সে আলোচনা হয় শিশুর মানসিক বিকাশ, শিক্ষায় ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি, প্যারেন্টিং-এর নতুন প্রজন্মের চ্যালেঞ্জ ও সমাধান, কার্যকর যোগাযোগ, পরিবারের ভূমিকা এবং চরিত্র গঠনের গুরুত্ব নিয়ে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, দিনাজপুর এর চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ তৌহিদুল ইসলাম। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল। প্রধান আলোচক ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লেখক ও গবেষক ড. আহসান হাবীব ইমরোজ, চেয়ারম্যান, প্যারেন্টিং অ্যাফেয়ার্স, ইন্টারন্যাশনাল পিস ফাউন্ডেশন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফাউন্ডেশনের মেম্বার সেক্রেটারি আলমগীর মোহাম্মদ ইউসুফ। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ইন্টারন্যাশনাল পিস স্কুল অ্যান্ড কলেজের চেয়ারম্যান ও প্রিন্সিপাল প্রফেসর ড. এ এইচ এম আবুয়াল ইসলাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর মোঃ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “আজকের শিশুরাই ভবিষ্যতের বাংলাদেশ। তাদের সঠিক চরিত্র গঠনের জন্য পরিবার এবং বিদ্যালয়ের যৌথ দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু পরীক্ষায় ভালো ফল নয়-একজন শিক্ষার্থীকে মানবিক, নৈতিক, দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে ইতিবাচক প্যারেন্টিং অপরিহার্য। অভিভাবকরা যদি সন্তানকে সময় দেন, কথা বলেন এবং তাকে বুঝতে শেখেন-তাহলেই শিশুর আত্মবিশ্বাস ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পায়।”
তিনি আরও বলেন, “প্রতিটি স্কুলে এ ধরনের কনফারেন্স নিয়মিত হওয়া উচিত। শিক্ষার পাশাপাশি সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও মূল্যবোধের চর্চা অত্যন্ত জরুরি।”
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ড. আহসান হাবীব ইমরোজ তাঁর প্রাঞ্জল উপস্থাপনায় বলেন, “আধুনিক যুগে প্যারেন্টিং আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি চ্যালেঞ্জিং। প্রযুক্তির ব্যবহারে সচেতনতা, অতিরিক্ত চাপ থেকে শিশুকে রক্ষা, শেখা-শেখানোর সঠিক পদ্ধতি-সবই আজকের অভিভাবকের শেখার বিষয়। সন্তানকে বড় করার সবচেয়ে বড় উপায় হলো তার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করা। সন্তান ভুল করলে বকাঝকা নয়, বরং তার অনুভূতি বোঝা এবং তাকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই অভিভাবকের সাফল্য।”
তিনি আরও বলেন, “শিশুর প্রতি সম্মান, ভালোবাসা ও নিরাপদ পরিবেশ-এই তিনটি জিনিস যে পরিবার দিতে পারবে, সেই পরিবারই পরবর্তী প্রজন্মকে সফল ও মানবিকভাবে গড়ে তুলতে পারবে।”
টাউন হলের পুরো পরিবেশ ছিল প্রাণবন্ত। অভিভাবকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ, শিক্ষকদের উপস্থিতি এবং বিশেষজ্ঞদের গভীর বিশ্লেষণ কনফারেন্সকে করেছে আরও সমৃদ্ধ। উপস্থিতরা জানান, এ ধরনের অনুষ্ঠান তাঁদের শিশুকে বোঝা ও সঠিকভাবে গড়ে তোলার পথে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি যোগ করেছে।
অনুষ্ঠান শেষে সভাপতি ড. এ এইচ এম আবুয়াল ইসলাম বলেন, “শিক্ষার পাশাপাশি সঠিক অভিভাবকত্বই শিশুর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। এই ধরনের কনফারেন্স ভবিষ্যতেও নিয়মিত আয়োজন করা হবে।”