নাটোরে লালপুরে গোসাইজির আশ্রমে ৩২৭ তম নবান্ন উৎসবে সন্তান লাভের আশায় শতবর্ষী গাছের নিচে নিঃসন্তান নারীদের ভিন্নধর্মী অবস্থান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নাটোরে লালপুর উপজেলার দুড়দুড়ীয়া ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী ফকিরচাঁদ বৈষ্ণব গোসাই আশ্রমে ৩২৭ তম নবান্ন উৎসবকে ঘিরে এ বছরও দেখা মিলেছে এক ভিন্নধর্মী আবেগময় দৃশ্য। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সন্তান লাভের আশায় এখানে ভিড় করছেন নিঃসন্তান নারীরা। তাদের বিশ্বাস মতে আশ্রমের শতবর্ষী গাছটির নিচে ভেজা আঁচল পেতে প্রার্থনায় বসলে ঈশ্বরের কৃপায় সন্তান লাভ হয়। শনিবার (২২ নভেম্বর) সকাল থেকে শুরু হয় দিনব্যাপী নবান্ন উৎসব। দূর দূরান্তের ভক্তবৃন্দের আগমনে আশ্রম প্রাঙ্গনে তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ।
এ সময় আশ্রম চত্বরের অক্ষয় গাছ নামে পরিচিত শতবর্ষী বটগাছের নিচে একত্রিত হয় বহু নারী। তাদের মধ্যে নিঃসন্তান নারীরা আশ্রমের পুকুরে স্নান করে ভেজা কাপড়ে রঙিন শাড়ির আঁচল বিছিয়ে নীরবে অপেক্ষা করতে থাকেন।তাদের বিশ্বাস গাছের কোন পাতা কিংবা ফল যদি সেই আঁচলে এসে পড়ে তবে তার সন্তান লাভের শুভ সম্ভাবনার ইঙ্গিত।
বট গাছের নিচে নারীদের এই গভীর মনোনিবেশ আবেগ আর প্রত্যাশা উৎসবে আসা অন্যান্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এমন দৃশ্য দেখতে নারী-পুরুষ ভিড় জমায়। অনেকেই দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকেন, আবার কেউ কেউ পার্থনায় অংশ নেন। সব মিলিয়ে দৃশ্যটি হয়ে উঠে মানবিক ও হৃদয়স্পর্শী। উপস্থিত নারী -পুরুষরা জানান, বহু বছর ধরে নবান্ন উৎসবের সময়ে এই নিয়ম পালন করে আসছেন। অনেকে সন্তান লাভের পর কৃতজ্ঞতা জানাতে আশ্রমে আসেন।
এ বিষয়ে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার হাফিজুর রহমান নোমানী জানান, মেডিকেল সাইন্সে এর কোন ভিত্তি নেই। এটা কুসংস্কার। আশ্রম চত্বরে ভক্তদের মাঝে বিতরণ করা হয় প্রসাদ।
দিন ব্যাপী উৎসব উপলক্ষে আশ্রম চত্বরে নারী পুরুষ শিশু বৃদ্ধ সহ সব বয়সী মানুষের উপস্থিতিতে আশ্রম চত্বর মিলন মেলায় পরিনত হয়। লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. জুলহাস হোসেন সৌরভ নবান্নের এই আয়োজন পরিদর্শন করেন।
আশ্রম কমিটির সভাপতি সঞ্জয় কর্মকার জনান, সকলের সহযোগিতায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নবান্ন উৎসব চলছে। আগামী কাল বাসী নবান্ন উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। তিনি সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।