নড়াইলের কালিয়া উপজেলার নড়াগাতী থানার পাকুড়িয়া গ্রামে চাঞ্চল্যকর ৬ বছরের শিশু হামিদা হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনসহ প্রকৃত হত্যাকারীদের মুখোশ উন্মোচন করেছে পুলিশ। লিখিত চিরকুটের সূত্র ধরে এ হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেফতারের পর তাদের স্বীকারোক্তিতে উন্মোচিত হয়েছে প্রকৃত ঘটনা। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ছয়টায় উপজেলার নড়াগাতী থানা কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ শরিফুল ইসলাম। নড়াগাতী থনার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ শরিফুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, ২০২৪ সালের ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যার দিকে একটি ধানক্ষেত থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ৬বছরের শিশু হামিদার লাশ উদ্ধার করে এলাকাবাসী। এ ঘটনায় বিভিন্ন মিডিয়ায় নানা শিরোণামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে নিহত হামিদার পিতা শাহানুর শেখ বাদী হয়ে প্রতিবেশী তোতা মিয়া শিকদারসহ তার পরিবারের ৬জনকে আসামী করে নড়াগাতী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে একটি মোবাইল ফোন ও হাতে লেখা কয়েকটি চিরকুট আলামত হিসেবে জব্দ করে। অতঃপর চিরকুটের সূত্র ধরেই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে নামে পুলিশ। তদন্তের একপর্যায়ে নিহতের প্রতিবেশী স্কুল পড়ুয়া সুমি খানমের (১৪) হাতের লেখার মিল পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে গত ১ ডিসেম্বর আটক করে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যমতে গত ১৯ ডিসেম্বর তার পিতা রবিউল ইসলাম ও মা ফরিদা বেগমকে পুটিমারী এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আসামী ফরিদা বেগম ও রবিউল ইসলামকে গ্রেফতারের পর বিজ্ঞ আদালতে দেয়া তাদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে ওসি মোঃ শরিফুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে আরো জানান, নিহত হামিদার পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশী তোতা মিয়া শিকদারের পারিবারিক কলহ ছিল। অপরদিকে, রবিউল ইসলামের সঙ্গে পারিবারিক কলহ ছিল প্রতিবেশী আসামী তোতা মিয়া শিকদারের। এ কলহের জের ধরে তোতা মিয়া সিকদার ও তার ছেলে ফেরদৌস শিকদার প্রতিবেশী রবিউল ইসলাম ও তার স্ত্রী ফরিদা বেগমকে মারধর করে। এতে রবিউলের পরিবারের মধ্যে রাগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে তারা পরিকল্পনা করে ফরিদা বেগম ও তার স্কুলপড়ুয়া কন্যা সুমি খাতুনকে দিয়ে কিছু চিরকুট লিখিয়ে ভিকটিম হামিদার বাবা শাহানুর শেখের বাড়ির আশপাশে আগুন লাগিয়ে দেয়। এই চিরকুট লেখা ও আগুন লাগানোর বিষয়ে রবিউল ও তার পরিবারের সদস্যরা বারবার তোতা মিয়া শিকদারের ছেলে ফেরদৌস শিকদারকে দোষারোপ করে এর দায়ভার তার উপর চাপিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে ঘটনার দিন গত বছরের ১৪ নভেম্বর বিকালে হামিদাকে একা পেয়ে ফরিদা, রবিউল ও তাদের মেয়ে সুমি খানম মুখচেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে একটি বস্তায় ভরে পার্শ্ববর্তী ধানক্ষেতে রেখে দেয়। এদিকে, হামিদাকে না পেয়ে তার পরিবারের সদস্যরা খোজাখুঁজি করতে থাকলে রবিউল ইসলামও তাদের সঙ্গে হামিদাকে খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে কেউ যাতে সন্দেহ করতে না পারে; সেজন্য রবিউল ইসলাম নিহত হামিদার বাবাকে সঙ্গে নিয়ে ধানক্ষেতের দিকে যায় এবং হামিদার মরদেহ দেখে শনাক্ত করেন। অতঃপর, প্রতিশোধ নিতে রবিউল ইসলাম এ হত্যাকান্ডের দায়ভার তোতা মিয়া শিকদার ও তার পরিবারের সদস্যদের উপর চাপাতে নিজেই মামলার শনাক্তকারী হন। কিন্তু, পুলিশ তদন্তে শনাক্তকারী রবিউল ইসলামসহ তার স্ত্রী ফরিদা বেগম ও কন্যা সুমি খাতুন মূল অপরাধী হিসাবে চিহ্নিত হয়। অতঃপর, চিরকুটের সূত্র ধরেই হামিদা হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও প্রকৃত হত্যাকারীদের মুখোশ উন্মোচন হয়েছে পুলিশ তদন্তে।