পলাতক চিকিৎসকসহ ক্লিনিকের সব স্টাফ

বরিশালে চিকিৎসা অবহেলায় প্রসূতির মৃত্যু

এফএনএস (বরিশাল প্রতিবেদক) : | প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:৪৯ পিএম
বরিশালে চিকিৎসা অবহেলায় প্রসূতির মৃত্যু

সিজার অপারেশনের পর চিকিৎসক ও বেসরকারি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলায় সাথী আক্তার পরি (২২) নামের এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পরপরই সিজারকারী চিকিৎসক ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ কৗেশলে ক্লিনিক থেকে পালিয়ে গেছে।

বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পরলে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালিয়ে ক্লিনিক ভাঙচুর করেছে। খবরপেয়ে মৃতের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বরিশালের উপজেলার বাটাজোর এলাকার মদিনা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।

মৃত সাথী আক্তার পরি উজিরপুর উপজেলার ভরসাকাঠী গ্রামের ইমন আকনের স্ত্রী। মৃতের শ্বশুর নজরুল আকন জানিয়েছেন, শনিবার বেলা ১১টার দিকে তার পুত্রবধূর প্রসব বেদনা শুরু হলে মদিনা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়।

প্রথমে ক্লিনিকের চিকিৎসক রাজিব কর্মকার নরমাল ডেলিভারির কথা বলে পাঁচ হাজার টাকার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। পরবর্তীতে সিজার করার সিদ্ধান্ত নেন। এসময় তিনি (নজরুল) সিজারে আপত্তি জানালে বরিশাল থেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক এনে অপারেশন করানোর আশ্বাস দেন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগ করে নজরুল আকন বলেন, বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সিজারের মাধ্যমে ছেলে বাচ্চার জন্ম দেয় পরি।সিজারের পরপরই সিজারকারী চিকিৎসক ক্লিনিক ত্যাগ করে চলে যায়। পরবর্তীতে আধাঘন্টা পর পরিকে বেডে দেওয়া হলে তার শরীর সম্পূর্ন সাদা হয়ে যায় এবং শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।

শাসকষ্টের বিষয়টি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা জানায় ক্লিনিকে কোন অক্সিজেন নেই, বাইরে থেকে আনতে হবে। পরে একজন স্টাফ অক্সিজেন আনতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি।

অভিযোগ করে মৃত পরির শ্বশুর আরও বলেন, পরির শারিরিক অবস্থা আরও খারাপ হলে আমরা চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করি। এসময় ক্লিনিকের চিকিৎসক রাজিব কর্মকার এসে পরীক্ষা করে আমাদের কোন কিছু না জানিয়ে ক্লিনিক থেকে বের হয়ে যায়। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্লিনিকের সব স্টাফরা কৌশলে পালিয়ে যায়।

পরবর্তীতে পাশের একটি ক্লিনিক থেকে চিকিৎসক এনে পরীক্ষা করিয়ে জানতে পারি পরি মারা গেছে।  তবে ক্লিনিকের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ল্যাব টেকনোলজিস্ট প্রান্ত হালদার জানিয়েছেন, ডা. সমিরন হালদার নামের এক চিকিৎসক পরির সিজার অপারেশন করেছে।

এ বিষয়ে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ করে গা ঢাকা দেওয়া কোন ধরনের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এমনকি সিজারকারী ডা. সমিরন হালদারের মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।

গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো. তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, খবরপেয়ে মৃতের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাহতা জারাব সালেহীন বলেন, ভুক্তভোগীর পরিবার অভিযোগ দায়ের করলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের গাফলতি পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে