সবুজে মোড়া শ্রীমঙ্গল। চা-উদ্যান আর পাহাড়ি ঝর্ণার মতোই এই অঞ্চলে বন্যপ্রাণীর আবাসও নীরবে বিস্তৃত। মানুষ আর প্রকৃতি এখানে পাশাপাশি চললেও মাঝে মধ্যে অপ্রত্যাশিতভাবে মানুষ-প্রাণীর মুখোমুখি হওয়া নতুন নয়। তেমনই এক ঘটনায় সোমবার দুপুরে শ্রীমঙ্গলের ইছবপুর এলাকায় মিলল এক বিশাল অতিথি-প্রায় ১২ ফুট দৈর্ঘ্যরে আর ২০ কেজি ওজনের একটি অজগর।
দুপুর ১টার দিকে এলাকার কয়েকজন শ্রমিক ঝোপঝাড় পরিষ্কারের কাজ করছিলেন। কাজের এক পর্যায়ে তারা দেয়ালের ওপর কুণ্ডলী পাকানো অবস্থায় দেখতে পান বিশাল আকৃতির অজগরটিকে। অপ্রত্যাশিত দৃশ্য দেখে শ্রমিকরা মুহূর্তেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কাজ থামিয়ে দ্রুত নিরাপদ দূরত্বে সরে দাঁড়ান তারা।
ঘটনার খবর দ্রুত পৌঁছে যায় অধ্যক্ষ অশীত কুমার পাল ও অনিক দেবের কাছে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে তারা তৎক্ষণাৎ যোগাযোগ করেন বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে।
খবর পাওয়ার পরপরই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্বপন দেব সজল, পরিবেশকর্মী রাজদীপ দেব দীপ, ও রিদন গৌড়। অভিজ্ঞতা আর দক্ষতার সমন্বয়ে তারা অজগরটিকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেন। প্রায় ১২ ফুট দীর্ঘ ও ২০ কেজি ওজনের এই অজগরটির আচরণ শান্ত থাকায় উদ্ধারকাজও সম্পূর্ণ হয় কোনোরূপ ক্ষতি ছাড়াই।
উদ্ধারের পর অজগরটিকে শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী পর্যবেক্ষণ শেষে অজগরটিকে নিরাপদ বনাঞ্চলে অবমুক্ত করা হবে।
শ্রীমঙ্গলে এমন অজগর দেখা নতুন নয়। বনভূমি, পাহাড়ি এলাকা ও জলাশয়ের আশেপাশে অজগরের বসবাস সাধারণত স্বাভাবিক ঘটনা। বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্যের সন্ধানে বা আবাসস্থল ব্যাহত হলে এসব সাপ মানববসতিতে ঢ়ুকে পড়ে। তাই এ ধরনের পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত না হয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করাই সর্বোত্তম উপায়।
এই ঘটনাটি আবারও মনে করিয়ে দেয়-প্রকৃতির বাসিন্দারা শুধু মানুষ নয়, বন্যপ্রাণীরাও আমাদের প্রতিবেশী। সহাবস্থানের সংস্কৃতি বজায় রাখতে সচেতনতা ও দায়িত্বশীল আচরণই হতে পারে বড় অবলম্বন।