চরভদ্রাসনে পেঁয়াজ আবাদের ধুম, গুটি পেঁয়াজের চড়া মূল্যে কৃষক হতাশ

এফএনএস (চরভদ্রাসন, ফরিদপুর) : | প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর, ২০২৫, ০৪:১০ পিএম
চরভদ্রাসনে পেঁয়াজ আবাদের ধুম, গুটি পেঁয়াজের চড়া মূল্যে কৃষক হতাশ

ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পেঁয়াজ উৎপাদনে জন্য খ্যাত। পদ্মার নদী বেষ্টিত অত্র উপজেলার পলল ভূমিতে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়ে থাকে। তাই প্রতি বছরের ন্যায় এবারও রবি মৌসুমে মুড়ি কাঠা পেঁয়াজ আবাদের ধুম লেগে আছে প্রতিটি কৃষক পরিবারে। তবে এ বছর গুটি পেঁয়াজের চড়ামূল্যে কৃষকরা হাতাশা প্রকাশ করলেও থেমে নেই আবাদ। 

খোজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার চারটি ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার কৃষক পরিবার চলতি মৌসুমে গুটি পেঁয়াজ রোপন কাজে ব্যাস্ত সময় পার করছে। আবাদী জমি সাজানো, বাজার থেকে গুটি পেঁয়াজ সংগ্রহ, সার ও মজুর কিনে এনে জমিতে গুটি পেঁয়াজ রোপন সহ আবাদী জমিতে সেচকার্যে দিনরাত ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন উপজেলার কিষাণ কিষানীরা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়,  এ বছর উপজেলায় প্রায় ১ হাজার ৫শ’ একর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হচ্ছে। এর মধ্যে চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নে প্রায় ৪২০ একর, গাজীরটেক ইউনিয়নে প্রায় ৪১০ একর, চরহরিরাপুর ইউনিয়নে প্রায় ৪০০ একর ও চরঝাউকান্দা ইউনিয়নে প্রায় ২৭০ একর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হচ্ছে। তবে এ বছর বাজারে গুটি পেঁয়াজের উচ্চ মূল্য হওয়ায় অনেকে পেঁয়াজ আবাদে আগ্রহ হারাচ্ছেন।

মঙ্গলবার উপজেলার চরহরিরামপুর ইউনিয়নের চরশালেপুর গ্রামের পেঁয়াজ চাষী সালাম ফকির (৫৮) জানায, “ বাজারে একমন গুটি পেঁয়াজ প্রায় ৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক বিঘাত (৩৩ শতাংশ) জমিতে মুড়িকাঠা পেঁয়াজের আবাদ করতে প্রায় ১০ মন গুটি পেঁয়াজ লাগে। সেই সাথে জমি সাজানো, সার, সেচ ও মজুর মিলে প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। সে আরও জানায়, এ বছর পেঁয়াজ চাষীরা ডিএপি সার সংকটে ভুগছে। সরকারি বরাদ্দ কম হওয়ায় ডিলারদের কাছে ডিএপি সার পাওয়া যায় না। তাই কৃষকরা বাধ্য হয়ে ১০৫০ টাকা দরে প্রতি বস্তা সার বাইরে থেকে ১৮০০ টাকা তরে কিনে এনে পেঁয়াজ আবাদ করে চলেছে”। 

উপজেলা সদর বাজার ঘুরে জানা যায়, প্রতি মন মোটা গুটি পেয়াঁজ বীজ ৩ হাজার ৮শ’ টাকা দরে এবং চিকন গুটি পেঁয়াজ প্রায় ৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অনেক দুর দুরান্ত থেকে কৃষক ও পাইকাররা এসে অত্র বাজার থেকে গুটি পেঁয়াজ কিনে নিয়ে যাচ্ছে। 

উপজেলার চরঝাউকান্দা ইউনিয়নের কল্যানপুর গ্রামের এক কৃষক আবজাল বিশ্বাস (৪২) বলেন, “ মৌসুমে পেঁয়াজ আবাদ করতে খরচ যাই হোক না কেনো, বাপ দাদার পেশা তাই জমিতো আর অনাবাদী রাখা যাবে না। তিনি আরও জানান, পদ্মার চরের এক বিঘাত (৩৩) শতাংশর জমিতে কম হলেও ১২০ মন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে। তাই উৎপাদন মৌসুমে বাজার মূল্য ঠিক থাকলে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মুক্ত থাকলে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা নাই”।  একই দিন আরেক কৃষক আলম মিয়া (৫০) বলেন, “ যেসব কৃষকদের ঘরে গুটি পেঁয়াজ মজুদ আছে এবং মাঠে নিজেরা কাজ করতে পারে. কেবল মাত্র তারাই পেঁয়াজ আবাদ করে প্রচুর লাভবান হতে পারবে”।

তবে প্রতিকুল পরিস্থির মধ্যে থেকেও এ বছর উপজেলার কৃষকরা পেঁয়াজ আবাদে থেমে নেই। তারা নিজেদের সর্ব পূঁজি বিনিয়োগ করে জমিতে মুড়িকাঠা পেঁয়াজ আবাদ করে চলেছেন। উপজেলার বেশীরভাগ আবাদী জমি পদ্মা নদীর আশ-পাশ এলাকায় হওয়ায় পললবাহিত মাটিতে পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য খুব উপযোগী বলে জানা যায়।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে