দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলায় চলতি রবি মৌসুমে ৪৭ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া আগাম জাতের আলু এ পর্যন্ত ২৫ ভাগ লাগানো সম্পন্ন হয়েছে।
কৃষকদের দাবি, ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে জেলার বাজার গুলোতে নতুন আলু বাজারজাত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে তারা আলু ক্ষেতে পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। মৌসুমের শুরুতেই কৃষকরা আগে ভাগে বাজারে নতুন আলু উঠাতে পারলে তুলনা মূলক আলুর মূল্য একটু বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো.আফজাল হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, সারাদেশে কৃষি পণ্য ও রবি শষ্য উৎপাদনের অন্যতম জেলা হিসেবে দিনাজপুর ব্যাপক জনশ্রুতি রয়েছে। রবি মৌসুমে অন্যতম শস্য আলু চাষে বাম্পার ফলনের লক্ষ্যে কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মীরা কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। রবি মৌসুমে অন্যান্য সবজি জাতীয় ফসল লাগানোর পাশাপাশি আলু চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে অধিক ফলনের আলুর বীজ বপনের পরামর্শ ও সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে বলে কৃষি বিভাগ দাবি করছেন।
সূত্রটি জানান, চলতি বছর রবি মৌসুমে গত ২০ অক্টোবর থেকে জেলার ১৩'টি উপজেলায় আগাম জাতের গোল্ডেন, গ্যানোলা ও কারেজ আলু বীজ লাগানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগাম জাতের আলুর জমিতে গাছ বড় হতে শুরু করেছে। প্রথম পর্যায়ে ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যেই আগাম জাতের আলু গোল্ডেন, গ্যামেলা ও কারেজ ডিসেম্বর মাসে প্রথম সপ্তাহে বাজারে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে। আগাম নতুন আলু বাজারে উঠাতে পারলে কৃষকেরা ভালো মূল্যে বাজার জাত করতে পারবে।
নভেম্বর থেকে আগামী বছর ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ভ্যারাইটি জাতের আলুর বীজ কৃষকেরা জমিতে লাগাবেন। আমন ধান কাটার পর অতিরিক্ত ফসল হিসাবে ডিসেম্বর মাসে ওই জমিতে আলু চাষ করেন। কৃষকেরা জমি প্রস্তুত করে আলুর ভ্যারাইটি, ডায়মন্ড, কার্টিলাল, স্টারিজ, দেশী জাতের চল্লিশা, রোমানা, পেট্রোনিজ আলুর বীজ লাগাতে থাকবে। এর পরে জানুয়ারি মাসের শুরুতেই হাইব্রিড জাতের আলু লেডিরোসেটা, বারী-২, বারী-৯, এটলাস এবং দেশী জাতীয় স্থানীয় আলু লাল পাকড়ি, সাদা পাকড়ি, বগড়াই, সেলবিলাতী, কাবেরী, জলপাই, সাদা-পাটনায় ও লালপাটনায় আলুর বীজ লাগানো শুরু করবে। সব মিলিয়ে এক দিকে যেমন আলুর বীজ লাগানো হবে।
আবার অন্যদিকে উৎপাদিত আলু জমিতে থেকে কৃষকের ঘরে উঠতে থাকবে। আগাম জাতের আলু রবি মৌসুমের শুরুতেই নতুন আলু হিসাবে গ্রাহকরা এ আলু তৃপ্তি সহকারে খেতে পারবেন। বাসায় আলুর মজুত রাখতে এবং সারা বছর খাওয়ার জন্য যে আলু উৎপাদন হবে তা আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির পর থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ওই আলু জমি থেকে কৃষকেরা উঠাতে পারবে। এসব আলুর মধ্যে দেশী স্থানীয় জাতের লালপাকড়ি, সাদাপাকড়ি, বগড়াই, সেলবিলাতী, কাবেরী, জলপাই, সাদাপাটনাই ও লাল পাটনাই আলু অন্যতম। এবারে গড়ে আলুর প্রতি হেক্টরে ফলন নির্ধারণ করা হয়েছে ২২'দশমিক ২১ মেট্রিক টন। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জেলায় ১০ লাখ ৫৯ হাজার ৪৪৮ মে.টন ৫০০ কেজি আলু উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আলুর ফলন পেতে কৃষি বিভাগ কৃষকদের আলুর ক্ষেতে পরিচর্যা, বালাই নাশক, কীটনাশক ব্যবহার ও প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার এবং গোবর সার দেয়ার জন্য পরামর্শ ও সহযোগিতা চলমান রেখেছে।
সূত্রটি জানান, এবারে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকলে, জেলায় বাম্পার আলু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। গতবছর জেলায় ৪৮ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে আলু অর্জিত হয়েছিল। ফলন হয়েছিল ১০ লাখ ৮০ হাজার ৫০০ মে.টন আলু। লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত আলু চাষ করতে কৃষি বিভাগ উৎসাহ দিয়ে কৃষকদের সহযোগিতা করছেন বলে কৃষি বিভাগ দাবি করেন।
জেলার হাকিম পুর উপজেলার মুহাড়াপাড়া গ্রামের কৃষক বেলাল সরদার জানান, তিনি এবারে আগাম জাতের আলু নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে গ্যানোলা ও কারেজ ভ্যারাইটি ৮০ শতক জমিতে চাষ করেছেন। আলুর গাছ পরিচর্যার মাধ্যমে আলু অর্জিত হওয়ার উপযোগী করে তোলার পর্যায়ে কাজ চলমান রয়েছে। তিনি আশা করছেন ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে তার আলু বাজার জাত করতে পারবেন।
একই বক্তব্য প্রদান করেন সদর উপজেলা কৃষক মো. নজরুল ইসলাম, তিনি বলেন, আগাম জাতের আলু ৬০ শতক জমিতে চাষ করেছি। অর্জিত আলু আগামী ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বাজারে তুলতে পারবেন এবং অর্জিত আলুর ভালো দাম পাওয়া আশা করছেন।