চিরিরবন্দরে উদ্বোধনের ৪ বছরেও চালু হয়নি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র

এফএনএস (মোরশেদ-উল-আলম; চিরিরবন্দর, দিনাজপুর) : | প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর, ২০২৫, ০২:৩২ পিএম
চিরিরবন্দরে উদ্বোধনের ৪ বছরেও চালু হয়নি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার নশরতপুর ইউনিয়নের রানীরবন্দর ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি উদ্বোধনের পর কেটে গেল প্রায় চার বছর। কিন্তু পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর জনবল বরাদ্দ না দেয়ায় এটি আজও চালু হয়নি। ফলে আশানুরুপ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়ন ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অর্থায়নে পৌনে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়। ২০২২ সালের জুন মাসে এই কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়। আধুনিক অবকাঠামো, বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা যন্ত্রপাতি থাকা সত্তেও কেন্দ্রটি বন্ধ। ব্যবহারের অভাবে যন্ত্রপাতিগুলো নষ্ট হতে বসেছে। এছাড়া এক বছরের বেশি বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় যেকোনো সময় সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নশরতপুর ইউনিয়নের রানীপুর গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য সাফিয়ার রহমান বলেন, মানুষের সেবা দেয়ার জন্য সরকার এত এত টাকা খরচ করে হাসপাতালটি নির্মাণ করল। অথচ ডাক্তার-নার্স নিয়োগ দেয়া হয়নি। তাহলে এই হাসপাতাল নির্মাণের কী দরকার ছিল? হাসপাতালটিতে ডাক্তার থাকলে আশপাশের হাজারো মানুষের কত উপকার হতো। আমরা স্থানীয়রা চাই দ্রুত হাসপাতালটিতে ডাক্তারসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিয়ে মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হোক।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মশিউর রহমান জানান, রানীরবন্দর ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি চালু হলে উপজেলার নশরতপুর, তেঁতুলিয়া ও আলোকডিহি ইউনিয়ন, খানসামা উপজেলার গোয়ালদিঘী ইউনিয়নসহ ১০ টি গ্রামের ৩০ হাজারের মত মানুষ উপকৃত হতেন। তিনি দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, হাসপাতালে আধুনিক ভবন, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং ডাক্তারদের থাকার আবাসিক ভবন সবই রয়েছে। কিন্তু অজানা কারণে এখানে ১৬ জনের একজনও লোকবল নিয়োগ দেয়নি সরকার। কেন্দ্রে চিকিৎসক না থাকায় বাধ্য হয়ে গর্ভবতী মা ও শিশুদের চিকিৎসার জন্য রানীরবন্দরের বেসরকারি ক্লিনিক বা ১৮ কিলোমিটার দূরের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যেতে হয়। তিনি আরও জানান, ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সহযোগিতায় সপ্তাহে দুই দিন একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার রাখা হয়েছে। যিনি জ্বর-সর্দিসহ বিভিন্ন রোগের ওষুধ প্রদান করেন।

রানীরবন্দর ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মী বেলাল হোসেন বলেন, হাসপাতালটি উদ্বোধনের পর থেকে আমি পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করে আসছি। কিন্তু হঠাৎ করে ১৬ মাস ধরে বেতন পাচ্ছি না। আমার বাসা থেকে হাসপাতালে যাওয়া-আসার দৈনিক খরচ ১৫০ টাকা। যেহেতু আমি কোনো বেতন-ভাতা পাচ্ছি না, তাই সপ্তাহে একদিন করে গিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে চলে আসি। এভাবে আর কত দিন কাজ করব? মো. বাচ্চু জানান, আমি হাসপাতালটি নির্মাণের সময় থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছি। অথচ আমি কোন বেতন-ভাতা পাই না। আমাকে চাকুরির মাষ্টার রোলেও রাখা হয়নি।

উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আরমান জনি বলেন, অবকাঠামো পুরোপুরি নির্মাণ হলেও ১৬ জনের বিপরীতে কোনো জনবল এখনও মন্ত্রণালয় বা সরকার থেকে অনুমোদন দেয়া হয়নি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ও জনগণের দোড়গড়ায় সেবা দিতে ও সেবার মান বাড়াতে জরুরী জনবল বরাদ্দ দেয়া হলে বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা যন্ত্রপাতিগুলো নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করা যেত। তিনি আরও জানান, এমন অবস্থায় তাঁরা ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদায়ন করেছেন। তিনি সপ্তাহে দুই দিন সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়ে থাকেন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে