“দেশীয় জাত, আধুনিক প্রযুক্তি-প্রাণিসম্পদ হবে উর্দ্ধগতি”এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে লোহজং সরকারি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হলো জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ ও প্রদর্শনী-২০২৫ এর উদ্বোধনী, আলোচনা সভা ও সমাপনী অনুষ্ঠান।
বুধবার ২৬ নভেম্বর সকাল ১১.৩০ ঘটিকায় লৌহজং উপজেলা প্রানিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের আয়োজনে লৌহজং সরকারী কলেজ মাঠে জাতীয় প্রনিসম্পদ সপ্তাহ ও প্রদশর্নী-২০২৫ উদ্বোধনী, আলোচনা সভা ও সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
ডাঃ জয় সরকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. নেছার উদ্দিন। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শ্যামল চন্দ্র পোদ্দার। বিশেষ অতিথি ছিলেন লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সোহানা।
আরও উপস্থিত ছিলেন লৌহজং উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মো. রেজাউল ইসলাম, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান উদ দৌলা, উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. জীবন ইবনে মাসুম, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. ইউসুফ ভুইয়া, লৌহজং সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোজাম্মেল হক, উপাধ্যক্ষ মো. সহিদুর রহমানসহ উপজেলার বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাগন উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় খামারী ওমর ফারুক অবাক প্রাণিসম্পদ খাতকে আরও উন্নত ও প্রযুক্তিনির্ভর করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি স্থানীয় খামারি, দুগ্ধ উৎপাদক ও পশুপালন সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও সুযোগ-সুবিধা তুলে ধরা হয়। এ উপলক্ষে লৌহজং সরকারী কলেজ মাঠে প্রানিসম্পদ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। প্রদশর্শনীতে মোট ৩২ টি স্টল অংশগ্রহণ করেন।
প্রদর্শনীতে স্থানীয় খামারিদের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন রকম গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, দুগ্ধজাত পণ্য, উন্নত জাতের পশু, পশুখাদ্য ও প্রাণিচিকিৎসা সেবাসংক্রান্ত স্টল প্রদর্শনীতে স্থান পায়।
অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল, লোহজং মুন্সীগঞ্জ, এবং প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি)। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এমন প্রদর্শনী কৃষক-খামারিদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রাণিসম্পদ খাতের সম্ভাবনা সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পৃষ্ঠপোষকতায় বাস্তবায়নাধীন সর্ববৃহৎ প্রকল্প প্রাণিসম্পদ ও ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্প (খউউচ)। এই প্রকল্পের সামগ্রিক লক্ষ্য হল প্রাণিসম্পদের উৎপাদন বৃদ্ধি, দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার সৃষ্টি, ক্ষুদ্র খামারী ও উদ্যোক্তাদের প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলায় সক্ষমতা সৃষ্টি, জনগণকে উন্নত জাতের গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগী প্রদর্শন করা, বিজ্ঞান ভিত্তিক লালন পালন কৌশল অবহিত করা, উন্নত জাতের পশু পাখি পালনের আধুনিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করা এবং সর্বোপরি জনসাধারণের জন্য নিরাপদ প্রাণিজ আমিষ সরবরাহ নিশ্চিত করা।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. শ্যামল চন্দ্র পোদ্দার বলেন, অত্র প্রকল্পের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে, অদ্য ২৬ নভেম্বর ২০২৫ খ্রিঃ, রোজ বুধবার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পৃষ্টপোষকতায় উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় প্রাণিসম্পদ ও ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল, লৌহজং, মুন্সিগঞ্জ কর্তৃক "প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী-২০২৫ লৌহজং সরকারি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উক্ত প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীতে বিশেষ আকর্ষন হিসাবে আছে ২৫ লিটার দুধের গাভী, ৮০০ কেজি ওজনের ষাড়, ৭০ কেজি ওজনের পাঠা, দৃষ্টিনন্দন গয়াল, ও উন্নত জাতের আকর্ষণীয় এলবেনু জাতের সাদা মহিষ। বিভিন্ন প্রজাতির পাখির মধ্যে বেগুনী কালিম পাখি, লাভ বার্ড, বাজরিগর ও অন্যান্য পাখি, বিভিন্ন প্রজাতির উন্নত জাতের ফেন্সি কবুতর, টার্কি, তিতির। উন্নত জাতের মুরগির মধ্যে রয়েছে ফাইটার, ব্রাহামা, ফ্লিমেন্ট, সিল্কি ও অন্যান্য জাতের মুরগী। প্রাণিসম্পদ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রযুক্তিতে রয়েছে দুধ দহনের মিল্কিং মেশিন, মিল্ক এনালাইজার, গাভীর গর্ভ পরীক্ষার জন্য হিট ডিটেক্টর মেশিন, ঘাস কাটার মেশিন, শিং কাটার মেশিন ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন। এছারাও রয়েছে উন্নত জাতের ঘাস চাষ প্রদর্শনী, ও বিনা মূল্যে ভেটেরিনারি
চিকিৎসা কেন্দ্র। তাছাড়াও দুগ্ধজাত পন্যের মধ্যে আছে মিষ্টি, দই, দই, ঘি, ঘি, পনির, পিঠাসহ অন্যান্য স্টল। অনুষ্ঠান শেষে কয়েকটি খামার প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন কেটাগরিতে পুরষ্কৃত করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. নেছার উদ্দিন খামারীদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, লৌহজং উপজেলা প্রানিসম্পদ দপ্তেরের আওতাধীন ও তত্বাবধানে একটি প্রতিষ্ঠান এবছর জাতীয় পর্যায়ে স্বর্নপদক পেয়েছেন । আমি মনে করি এই অর্জনের ফলে আপনাদের পরিশ্রম সফল হয়েছে। আপনাদের এই পরিশ্রম সত্যিই প্রশংসনীয়। আশা করি আগামীতে আপনাদের কাছ থেকে আরও ভালো কিছু পাবে এই লৌহজংবাসী। দেশ ও জাতির জন্য আপনাদের অবদান সব সময় জনগন মনে রাখবে।