রাজশাহীতে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় পরপর দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। সংঘর্ষের সময় ওয়ার্ড বিএনপির কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়, যা পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে দেয়।
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) রাত সাড়ে আটটার দিকে নগরীর চার নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, শুক্রবার রাত আটটায় ওয়ার্ড কার্যালয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল এবং আসন্ন নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে এক সভার আয়োজন করা হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন চার নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সদ্য বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা নেতা রুহুল আমিন টুনু, রাজপাড়া থানা বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামসহ অন্য নেতারা।
কিন্তু ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রকিব উদ্দিন টুটুল এবং তার অনুসারীরা টুনুর উপস্থিতিতে ক্ষুব্ধ হন। তারা সভাস্থলে গিয়ে টুনুকে জোর করে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেন এবং তাকে গালাগাল করেন। এর জেরে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে টুটুলের লোকজন দলীয় কার্যালয়ের দরজা ভাঙচুর করে।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে টুনু ও ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব রুবেলের সমর্থকদের প্রতিরোধে টুটুলপক্ষ কার্যালয় ত্যাগ করে। এর কিছুক্ষণ পর কার্যালয়ের সামনে রাস্তায় পরপর দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। তবে সংঘর্ষে কেউ গুরুতর আহত হয়নি বলে দলীয় সূত্র জানায়।
টুটুলপক্ষের অভিযোগ, টুনু আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে কাউন্সিলর ছিলেন এবং দলটির বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করেছেন। এখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টানোর পর তিনি আবার বিএনপিতে সক্রিয় হয়েছেন। তারা তাকে “বসন্তের কোকিল” বলে আখ্যায়িত করেন এবং দাবি করেন—দলীয় দুঃসময়ে টুনু নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন না।
অভিযোগ অস্বীকার করে রুহুল আমিন টুনু বলেন, টুটুলের নেতৃত্বে কয়েকজন তাকে সভাস্থল থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। তিনি জানান, এই ওয়ার্ডে তিনি বিএনপির দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ১০ বছর কাউন্সিলর ছিলেন। তিনি কখনই আওয়ামী লীগে যোগ দেননি; বরং তৎকালীন সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের চাপে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা থাকলেও সবসময় বিএনপিকেই সহযোগিতা করে এসেছেন।
ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব রুবেল জানান, তারা কোনো আইনগত পদক্ষেপ না নিয়ে পুরো ঘটনা লিখিতভাবে মহানগর বিএনপিকে জানিয়েছেন। তার দাবি—টুটুল এবং তার সমর্থকরা বিনা কারণে হামলা চালিয়েছেন।
এ বিষয়ে রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বিস্ফোরিত ককটেলের আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপি সমর্থিত ১৭ কাউন্সিলরকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরে রাজশাহী-২ আসনের বিএনপি প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনুর সুপারিশে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয় এবং গত ২৪ নভেম্বর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আনুষ্ঠানিক চিঠির মাধ্যমে তা প্রত্যাহার করেন।