ময়মনসিংহে নির্যাতন বিরোধী সনদ ও ঐচ্ছিক প্রোটোকল বিষয়ে অধিকারের সভা

এফএনএস (রকিবুল হাসান চৌধুরী রুবেল, ময়মনসিংহ) : | প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর, ২০২৫, ০৭:২৬ পিএম
ময়মনসিংহে নির্যাতন বিরোধী সনদ ও ঐচ্ছিক প্রোটোকল বিষয়ে অধিকারের সভা

বাংলাদেশে নির্যাতন প্রতিরোধ, জবাবদিহিতা বৃদ্ধি এবং মানবাধিকার কাঠামো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে শনিবার ময়মনসিংহে নির্যাতনবিরোধী সনদ এবং এর ঐচ্ছিক প্রোটোকলের বিষয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন অধিকার এর উদ্যোগে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নেটওয়ার্ক ওএমসিটি এর সহযোগিতায় ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে আয়োজিত এ সভায় মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সভায় ময়মনসিংহের ডিআইজি (প্রিজন) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জানান, হেফাজতে নির্যাতন এটা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। ২০১৩ সালের ‘নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন’ অত্যন্ত শক্তিশালী হলেও বাস্তবে মামলার সংখ্যা খুব কম এবং বিচার আরও কম। বর্তমান সরকার বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সনদে সাক্ষরের উদ্যোগ নিয়েছে যা প্রশংসনীয়। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মনির আলম বলেন, বাংলাদেশ ১৯৯৮ সালে নির্যাতনবিরোধী সনদ অনুমোদন করলেও এখনও ঐচ্ছিক প্রটোকল অনুস্বাক্ষর না করে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে আটকস্থলে স্বাধীন পরিদর্শন ব্যবস্থার অভাব, রিমান্ডে নির্যাতন, হেফাজতে মৃত্যু, জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। তিনি সরকারের প্রতি বেশ কিছু সুপারিশও তুলে দরেন। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ময়মনসিংহের সভাপতি এডভোকেট নূরুল হক বলেন, অনেক ক্ষেত্রে টর্চারের ভুক্তভোগীরা মামলা করতে ভয় পান বা বাধার মুখে পড়েন। তদন্ত প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রতা, সাক্ষীর নিরাপত্তার অভাব এবং রাষ্ট্রীয় সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনার জটিলতা ভুক্তভোগীদের নিরুৎসাহিত করছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান বলেন, ঐচ্ছিক প্রটোকল অনুস্বাক্ষরের প্রয়োজনীয়তা, জাতীয় পর্যায়ে একটি স্বাধীন প্রতিরোধ ব্যবস্থা গঠন, আটকস্থলে নিয়মিত ও স্বাধীন পরিদর্শন নিশ্চিত করা, এবং নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের আইনি সহায়তা ও সুরক্ষা জোরদার নিশ্চিতের মাধ্যমে নির্যাতন প্রতিরোধ সম্ভব। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহরোয়ার্দী হোসেন বলেন, বর্তমান সময়ে পুলিশে অনেক পরিবর্তন এসেছে। পুলিশকে আধুনিকায়ন ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে আরও উন্নত করা প্রয়োজন। নিয়মিত ট্রেনিং ও মানবাধিকার বিষয়ক কর্মশালা আয়োজন করলে পুলিশ সদস্যরা মানবাধিকার বিষয়ে আরও সচেতন হবে। অধিকার এর পরিচালক(এডভোকেসি) তাসকিন ফাহমিনা জানান, বাংলাদেশে রিমান্ডে নির্যাতন, গুম, হেফাজতে মৃত্যু এবং বিচারবহির্ভূত ঘটনার নথিভুক্তি অব্যাহত রয়েছে, এবং আন্তর্জাতিক মহলেও এ বিষয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। তিনি বলেন, নির্যাতন প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, শক্তিশালী আইনি কাঠামোর বাস্তবায়ন এবং মানবাধিকার কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, অধিকারের সমন্বয়কারী সাংবাদিক আব্দুল কাইয়ুম, ময়মনসিংহ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌশলী আজহারুল হক, সিভিল সার্জন(ভারপ্রাপ্ত) ডা: ফয়সাল মাহমুদ, জেলা তথ্য অফিসের পরিচালক মীর আকরাম উদ্দিন আহমেদ, জেলা আইনজীবি সমিতির আহবায়ক এডবোকেট সৈয়দ সাদউদ্দিন আহমেদ প্রিন্স, জামায়াতে ইসলামীর জেলার নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ কামরুল হাসান মিলন, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক একেএম মাহবুবুল আলম, মহানগর জামায়াতের সেক্রটারি শহিদুল্লাহ কায়সার, এনসিপির জেলা কমিটির সমন্বয়কারী এডভোকেট এটিএম মাহবুবুল আলম। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম, সাংবাদিক ইউনিয়ন ময়মনসিংহের সভাপতি আইয়ুব আলী, স্বদেশ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামসুদ্দোহা মাসুম, এখন টিভির বিশেষ প্রতিনিধি ও ব্যুরো ইনচার্জ হারুন অর রশিদ, দৈনিক কালের কণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার নিয়ামুল কবীর সজল, আরটিভির জেলা প্রতিনিধি বিপ্লব বসাক, চ্যানেল আই ও ইত্তেফাকের প্রতিনিধি শেখ মহিউদ্দিন, এটিএন নিউজের শাহ আলম উজ্জল, ডেইলি স্টারের জেলা প্রতিনিধি আমিনুল ইসলাম,

বার্তা সংস্থা ইউএনবির প্রতিনিধি রকিবুল হাসান রুবেল,যমুনা টেলিভিশনের ব্যুরো চীফ হোসাইন শাহিদ, স্টার নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার সাদিকুর রহমান, সময় টিভির রিপোর্টার ওবায়দুল হক, প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান,  সময়ের আলোর ব্যুরো চীফ জাহাঙ্গীর কবির জুয়েল, সমকালের নিজস্ব প্রতিনিধি তানভীর হোসাইন, ময়মনসিংহ সেন্ট্রাল কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম, ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের উপাধ্যক্ষ শওকত হোসাইন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহবায়ক মাজহারুল ইসলাম, মানবাধিকার কর্মী আমিনুল ইসলাম, আব্দুল আউয়াল, তাজবি উল হোসনা, দেলোয়ার হোসেন রাজীব, শফিকুল ইসলাম প্রমুখ। এছাড়া সভায় নির্যাতন ও গুমের শিকার ব্যক্তিরা তাদের ওপর নির্যাতনের ভয়াবহ বর্ণনা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠান শেষে বক্তারা নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে যৌথভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে