সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ আবারও পিছিয়েছে। রোববার ৩০ নভেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের দিন নির্ধারিত থাকলেও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। এতে মামলার তদন্তে বিলম্বের সংখ্যা দাঁড়াল ১২২ বার। আদালত নতুন করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৫ জানুয়ারি দিন ঠিক করেছে।
ঘটনার এক যুগ পর ২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর এই মামলার তদন্ত দায়িত্ব র্যাবের কাছ থেকে হস্তান্তর করা হয় পিবিআইয়ের কাছে। সেই সময় থেকে নতুন করে তদন্ত শুরু করে সংস্থাটি। দীর্ঘদিন ধরে তদন্তের অগ্রগতি না থাকায় হতাশা প্রকাশ করে আসছে নিহত পরিবারের সদস্যরা। আদালতেও একাধিকবার সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতি তদন্ত দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া করা বাসায় খুন হন সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। সাগর তখন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক ছিলেন এবং রুনি এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। ঘটনার পর রুনির ভাই নওশের আলম শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রথমে থানার পুলিশ তদন্ত করে, এরপর তা হস্তান্তর করা হয় ডিবির কাছে।
তদন্তের দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় হাইকোর্ট ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল ডিবিকে ব্যর্থতা স্বীকারে বাধ্য করে এবং র্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়। পরবর্তী সময়ে মামলার অগ্রগতি বিবেচনায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট র্যাবের তদন্ত দায়িত্ব বাতিল করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে গঠিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্সকে নতুন দায়িত্ব দেয়। আদালত নির্দেশ দিয়েছিল তদন্ত শেষ করে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে। নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন জমা না হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ সময় বাড়ানোর আবেদন জানায় এবং আদালত অতিরিক্ত ছয় মাস সময় মঞ্জুর করে।
তবে সম্প্রসারিত সময়ের মধ্যেও টাস্কফোর্স প্রতিবেদন দিতে পারেনি। গত ২৩ অক্টোবর হাইকোর্ট পুনরায় ছয় মাস সময় বাড়িয়েছে। এর মধ্যেই নিয়মিত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পেছাতে পেছাতে এবার সংখ্যা দাঁড়াল ১২২ বার। মিরপুর মডেল থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা উপপরিদর্শক রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, পিবিআই এখনো চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে পারেনি এবং তদন্ত এখনও চলমান।
দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত এই মামলায় এখন পর্যন্ত আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুইজন জামিনে মুক্ত রয়েছেন, বাকি ছয়জন কারাগারে আছেন। তবে হত্যার মূল কারণ কিংবা দায়ীদের বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট অগ্রগতি এখনো প্রকাশ পায়নি।