হাজারো মানুষ পানিতে ডুবে প্রাণ হারাচ্ছে। ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, সারা পৃথিবীতে প্রতি বছর তিন লাখ ৫৯ হাজারের মতো মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়, এর ৯০ শতাংশই মারা যায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। সব দেশেই পানিতে ডুবে মৃত্যুর মধ্যে এক থেকে চার বছরের শিশু মৃত্যুর হার বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে গড়ে প্রতিবছর প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি শিশু ও কিশোর। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মৃত্যুর হারকে নীরব মহামারী বলা যায়। কারণ দুর্ঘটনা হলেও এটি প্রতিদিনই ঘটে চলেছে এবং পরিবারগুলোকে গভীর শোকে নিমজ্জিত করছে। বাংলাদেশে শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ হলো পানিতে ডুবে যাওয়া। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এই হার বাড়ে। তবে শুষ্ক মৌসুমেও গ্রামীণ এলাকায় পুকুর, খাল, নদী বা ডোবার কারণে প্রায় প্রতিদিনই শিশু ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রামের শিশুদের খেলার ক্ষেত্র না থাকায় তারা সহজেই পুকুরপাড় বা জলাশয়ের আশপাশে চলে যায়, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০ জন মানুষ বাংলাদেশে পানিতে ডুবে মারা যায়। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি শিশু। কিন্তু এসব মৃত্যুকে এড়ানো সম্ভব যদি পরিবার ও সমাজ সচেতন হয়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের সবসময় পানির কাছে অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে রাখা, জলাশয়ের চারপাশে বেড়া দেওয়া, শিশুদের সাঁতার শেখানো এবং প্রাথমিক চিকিৎসা বা লাইফসেভিং স্কিল শেখানো গেলে উল্লেখযোগ্যভাবে মৃত্যুহার কমানো সম্ভব। মানুষের অসচেতনতা ও সরকারের সক্রিয় পদক্ষেপের অভাবে দেশে প্রতিদিনই পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর এমন মিছিল। হারিয়ে যাচ্ছে হাজারো সম্ভাবনাময় প্রাণ, আদরের ধন খুঁইয়ে দুঃসহ বেদনার হাহাকার প্রলম্বিত হচ্ছে হাজারো পরিবারে। আমরা মনে করি, এসব মৃত্যু কেবল সংখ্যা নয়, প্রতিটি ঘটনাই সংশ্লিষ্ট পরিবারের একেকটি শোকগাথা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিভাবকদের দায় অস্বীকার করার উপায় নেই। কেননা ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ শিশুর মৃত্যুর কারণ বাড়ির আশপাশের পুকুর। অভিভাবকরা আর একটু যত্নবান, সচেতন হলেই মৃত্যু ঠেকানো অসম্ভব কিছু নয়। সর্বদা স্মরণে রাখতে হবে, শিশুরা নাবালক। কোনটা ঝুঁকির আর কোনটায় ঝুঁকি নেই—এ জ্ঞান তাদের নেই। পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু কমাতে সরকারের সাঁতার শেখানোর কিছু উদ্যোগ রয়েছে, যা একদিকে অপ্রতুল; অন্যদিকে কার্যত এসব উদ্যোগের সফলতাও নির্ভর করে অভিভাবকের ওপরই।