সুপ্রিম কোর্ট পেল আলাদা সচিবালয়, বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় নতুন অধ্যায়

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর, ২০২৫, ১১:৪৪ পিএম
সুপ্রিম কোর্ট পেল আলাদা সচিবালয়, বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় নতুন অধ্যায়

বিচার বিভাগের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করে সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার পথ অবশেষে খুলে গেল। রোববার (৩০ নভেম্বর) আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রপতির নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করেছে। এর মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আদালত নিজস্ব প্রশাসনিক কাঠামো পেল পূর্ণাঙ্গ রূপ।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ গত ২০ নভেম্বর এ অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দিয়েছিল। বিচার বিভাগের কাঠামোগত স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে প্রধান বিচারপতি ২০২৪ সালের ২৭ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট থেকে পৃথক সচিবালয় গঠনের প্রস্তাব পাঠান। পরবর্তী কয়েক ধাপের পর্যালোচনা শেষে সরকার অধ্যাদেশ জারির সিদ্ধান্ত নেয়। এর মাধ্যমে বিচার বিভাগের সার্বিক প্রশাসন পরিচালনায় নতুন কাঠামো কার্যকর হলো।

মন্ত্রণালয় জানায়, অধ্যাদেশের সাত নম্বর ধারাকে বাদ দিয়ে বাকি সব ধারা অবিলম্বে কার্যকর হয়েছে। সাত নম্বর ধারা তখনই প্রয়োগ হবে যখন সচিবালয় পূর্ণাঙ্গভাবে গঠিত হয়ে কার্যক্রম শুরু করবে। সেখানে বলা হয়েছে, অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ, বদলি, শৃঙ্খলা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম রাষ্ট্রপতির পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় পরিচালনা করবে। নিয়ম অনুযায়ী এসব কার্যক্রম সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কমিটির পরামর্শে সম্পন্ন হবে।

বাংলাদেশে স্বাধীন বিচার বিভাগের দাবির ইতিহাস দীর্ঘ। ১৯৯৫ সালে বিসিএস বিচার অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মাসদার হোসেন ও সহকর্মীরা নির্বাহী প্রভাবমুক্ত বিচার বিভাগের জন্য মামলা করেন। সেই মামলার দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষ হয় ১৯৯৯ সালে আপিল বিভাগের রায়ে, যেখানে পৃথক বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা দেওয়া হয়। প্রায় ছাব্বিশ বছর পর সেই রায় বাস্তব রূপ পেল।

গত ২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত করার বিধান অসাংবিধানিক ঘোষণা করে। হাইকোর্ট বেঞ্চ সেই রায়ে বাহাত্তরের সংবিধানের আসল একশো ষোল নম্বর অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করে এবং তিন মাসের মধ্যে পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেয়। এরপরই সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের রূপরেখা তৈরি হয় এবং আজ তা বাস্তবে রূপ নিল।

অধ্যাদেশ পুরোপুরি কার্যকর হলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি, ছুটি এবং শৃঙ্খলার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় গ্রহণ করবে। তবে নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন বা আইন কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা আগের মতোই আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন থাকবেন।

উপদেষ্টা পরিষদের সভার পর আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে জানান, কয়েক মাসের মধ্যেই সচিবালয় পুরোপুরি কার্যকর হওয়ার আশা করা হচ্ছে। তাঁর মতে, বিচার বিভাগের স্বতন্ত্রতা নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি আদালতের প্রয়োগকৃত ক্ষমতা ও কার্যক্রমকে স্বাধীনভাবে পরিচালনার কাঠামো দেয়।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে