প্রেসিডেন্টের কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাইলেন নেতানিয়াহু, বিচার নিয়ে নতুন বিতর্ক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর, ২০২৫, ১১:৫৮ পিএম
প্রেসিডেন্টের কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাইলেন নেতানিয়াহু, বিচার নিয়ে নতুন বিতর্ক

ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিজের বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতি মামলায় প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। রোববার (৩০ নভেম্বর) প্রেসিডেন্টের দপ্তরে পাঠানো একাধিক চিঠিতে তিনি যুক্তি তুলে ধরেছেন যে বিচারকাজের চাপ তার শাসনব্যবস্থাকে প্রভাবিত করছে এবং ক্ষমা পেলে দেশ পরিচালনায় মনোযোগ দিতে পারবেন।

প্রেসিডেন্ট হারজগের কার্যালয় রোববার চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। আল জাজিরা জানায়, প্রেসিডেন্টের দপ্তর এটিকে একটি বিশেষ অনুরোধ হিসেবে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়, নেতানিয়াহুর স্বাক্ষরসহ ১১১ পাতার ক্ষমা আবেদন জমা দেন তার আইনজীবী অমিত হাদাদ।

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ঘুষ, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের তিনটি মামলা ২০১৯ সালে দায়ের হয় এবং ২০২০ সালে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তিনি সব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছেন। তার দাবি, গণমাধ্যম ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সম্মিলিত ষড়যন্ত্রের শিকার তিনি। নিজের বিবৃতিতে বলেন, রোববার তার আইনজীবীরা প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমার অনুরোধ পাঠিয়েছেন এবং এই সিদ্ধান্ত দেশের মঙ্গলের জন্য সহায়ক হবে।

আল জাজিরা জানায়, নেতানিয়াহু দু’টি পৃথক চিঠিতে যুক্তি দেন যে সপ্তাহে তিনবার আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে তার পক্ষে দেশ পরিচালনা করা কঠিন হয়ে উঠেছে। তিনি লিখেছেন দেশের ভেতরে বিভক্তি কমাতে এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির চাপে ঐক্য ফিরিয়ে আনতে তাকে পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে। তার বিশ্বাস, বিচার শেষ হলে উত্তেজনাও কমে যাবে।

দুর্নীতির মামলাগুলো ইসরায়েলে দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। কেস ১০০০, ২০০০ ও ৪০০০ নামে পরিচিত এসব মামলায় ধনী ব্যবসায়ী থেকে উপহার নেওয়া, সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে গোপন চুক্তির চেষ্টা এবং টেলিকম কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার বিনিময়ে অনুকূল সংবাদ পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত সাজা হতে পারে।

ইসরায়েলি সমাজে এই বিচারকে কেন্দ্র করে গভীর বিভক্তির কথাও উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে। আল জাজিরা মনে করিয়ে দেয়, ২০২২ সালে বিচার ব্যবস্থা সংস্কারে নেতানিয়াহুর উদ্যোগের পর দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হয় এবং ১০ সপ্তাহের আন্দোলনের মুখে তাকে পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়। সমালোচকদের মতে, এসব উদ্যোগ গণতান্ত্রিক কাঠামোকে দুর্বল করেছে।

নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও তাকে ক্ষমা দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। আল জাজিরা ও অন্যান্য সূত্র জানায়, তিনি ইসরায়েলের প্রেসিডেন্টকে এ বিষয়ে একাধিকবার চিঠি দিয়েছেন। ট্রাম্প এই মামলাগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করেন। ইসরায়েল সফরের সময়ও তিনি একই দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।

টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, রোববার পাওয়া ক্ষমার আবেদন এখন বিচার বিভাগ ও আইন উপদেষ্টাদের মতামতের জন্য পাঠানো হবে। এরপর প্রেসিডেন্ট চাইলে রায় ঘোষণার আগেও ক্ষমা দিতে পারবেন, যদিও দেশটির ইতিহাসে এমন ঘটনা অত্যন্ত বিরল।

নিজ দেশে বিচারাধীন থাকার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা রয়েছে। গত বছর আইসিসি তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করে।