নয় মাস পর তিন জাহাজে পৌঁছাল এক হাজার একশো পর্যটক

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০১:৪৭ পিএম
নয় মাস পর তিন জাহাজে পৌঁছাল এক হাজার একশো পর্যটক

কক্সবাজার থেকে দীর্ঘ বিরতির পর আবারও পর্যটকদের ভিড়ে মুখর হয়ে উঠল সেন্টমার্টিন। সোমবার (১ ডিসেম্বর) ভোরে মৌসুমের প্রথম যাত্রায় তিনটি জাহাজে এক হাজার একশো পর্যটক দ্বীপে পৌঁছানোর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে গেল দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপে পর্যটন মৌসুমের দরজা।

ভোর ৭টায় নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাট থেকে যাত্রা শুরু করে এমভি বার আউলিয়া, এমভি কর্ণফুলী ও কেয়ারি সিন্দাবাদ। কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌপথটি টানা নয় মাস বন্ধ থাকায় এ দিনকে ঘিরে আগ্রহ ও উচ্ছ্বাস ছিল পর্যটক এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে। পর্যটনের নতুন মৌসুমে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার তদারকিতে ঘাটজুড়ে ছিল শৃঙ্খলাবদ্ধ পরিবেশ।

এদিন অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারে কঠোর নজরদারি চালায় জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং ট্যুরিস্ট পুলিশ। জেলা প্রশাসক এম এ মান্নান জানান যে সচেতনতার অংশ হিসেবে প্রথম দিনের সকল যাত্রীকে অ্যালুমিনিয়ামের পানির বোতল দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সেন্টমার্টিন জাতীয় সম্পদ, তাই পরিবেশ রক্ষা এবং দায়িত্বশীল ভ্রমণ নিশ্চিত করাই এখন প্রধান লক্ষ্য।

ঘাটে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহিদুল আলম, কক্সবাজার সদরের ইউএনও নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী এবং ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ। তারা পর্যটকদের অভিবাদন জানান এবং সরকারি সব নির্দেশনা বাস্তবায়ন সরাসরি পর্যবেক্ষণ করেন। ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন যে প্রতিটি টিকিট যাচাই করা হচ্ছে এবং প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার নিয়ম কঠোরভাবে মানানো হচ্ছে।

নতুন মৌসুমে সরকারি ১২ নির্দেশনা মেনে দুই মাস, অর্থাৎ ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সেন্টমার্টিনে রাত্রিযাপনের সুযোগ রয়েছে। সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানান যে প্রস্তুতি আগেই সম্পন্ন ছিল এবং প্রথম দিনের যাত্রা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হওয়ায় জাহাজ মালিকদের আস্থা আরও বেড়েছে। তার মতে, পর্যটন খাতকে টেকসই রাখতে দীর্ঘ মেয়াদে রাত্রিযাপনের অনুমতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এর আগে ১ নভেম্বর থেকে দ্বীপে পর্যটক প্রবেশ উন্মুক্ত হলেও রাত্রিযাপন নিষেধাজ্ঞার কারণে এতদিন কোনো জাহাজ চলাচল করেনি। এবার নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে চারটি জাহাজ চলাচলের অনুমতি থাকলেও প্রথম দিনে তিনটি জাহাজেই যাত্রী ওঠানো হয়। প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবেন, যা দ্বীপের পরিবেশগত সহনশীলতা বিবেচনায় স্থির করা হয়েছে।

পর্যটকদের আগমনে সেন্টমার্টিনে আবারও একটু একটু করে ফিরে আসছে প্রাণচাঞ্চল্য। তবে জেটিঘাটের কাজ এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি বলে জানিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএস রহমান ইন্টারন্যাশনাল। তাদের প্রতিনিধি জানিয়েছেন যে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন হবে।

দ্বীপের নাজুক প্রতিবেশ রক্ষায় ঘোষিত ১২ দফা নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো নিষিদ্ধ, উচ্চ শব্দের অনুষ্ঠান বা বারবিকিউ আয়োজন বন্ধ, কেয়াবনে প্রবেশ নিষিদ্ধ, কাছিম, পাখি, রাজকাঁকড়া বা প্রবালসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয় এমন কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখা এবং দ্বীপে মোটরচালিত যানবাহন শূন্য রাখা। পরিবেশ অধিদপ্তর উপপরিচালক খন্দকার মাহমুদ পাশা বলেন, অ্যালুমিনিয়াম বোতল ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপ কার্যকরভাবে পালন হলে প্লাস্টিক দূষণ অনেকটাই কমে যাবে।

পর্যটকদের অনেকে জানালেন যে নতুন নিয়ম ও শৃঙ্খলা ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে আরও স্বস্তিদায়ক করে তুলেছে। রাজশাহী থেকে আসা এক দম্পতি বলেন, সেন্টমার্টিনের পরিবেশ রক্ষা করা সবার দায়িত্ব এবং এবার সেই চেষ্টার বাস্তব নজির দেখছেন তারা। অন্যদিকে অভ্যস্ত পর্যটকরা মনে করছেন, বিধিনিষেধ থাকলেও এবার যাত্রায় এসেছে নতুনত্ব ও স্বচ্ছতা।

নতুন ব্যবস্থাপনায় সুশৃঙ্খল ভ্রমণ নিশ্চিত করতে পারলে সেন্টমার্টিন আবারও তার আগের জৌলুস ফিরে পাবে— এমনটাই আশা স্থানীয় ব্যবসায়ী, প্রশাসন এবং পরিবেশবিদদের।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে