গাজীপুরের কালীগঞ্জের গণহত্যা দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে উপজেলা প্রশাসন। ১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর উপজেলার বাহাদুরসাদী ইউনিয়নাধীন খলাপাড়া গ্রামের ন্যাশনাল জুট মিলের ভিতরে পাক হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র ১০৩ জন নিরীহ বাঙালীকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে প্রতি বছর ১ ডিসেম্বর ‘শহীদের স্মরণে ১৯৭১’ স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পার্ঘ অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম কামরুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাকিয়া সরওয়ার লিমা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা তাছলিম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. মো. সিহাব মিয়া, উপজেলা প্রকৌশলী মো. রেজাউল হক, উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা আফরোজা বেগম, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন ভূইয়া, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নাহিদা খাতুন, উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান, উপজেলা তথ্যসেবা কর্মকর্তা সোহা তামান্না, পুলিশ প্রশাসন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ হোসেন পাঠান, মো. আনোয়ারুল হক বাচ্চু, মো. ফজলুল হক কাজী, মো. মনিরুল হক, মো. নুরুল ইসলাম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. সামসুল হক, মো. সিরাজ উদ্দিন, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ ‘শহীদের স্মরণে ১৯৭১’ স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পার্ঘ অর্পণ ও শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা বাঙালি জাতির ইতিহাসে বেদনাবিধুর একটি দিন। এদিন সকালে মিলের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকরা নাস্তার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখনই পাশের ঘোড়াশাল ক্যাম্প থেকে নদী পার হয়ে পাক হানাদার বাহিনী মিল চত্বরে প্রবেশ করে। সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধানে অভিযান চালানোর নামে সেখানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী নিরস্ত্র বাঙালিদের ধরে ধরে জড়ো করে লাইনে দাঁড় করিয়ে চলে ব্রাশফায়ার। প্রাণহীন হয়ে পড়ে একের পর এক শরীর। ন্যাশনাল জুট মিলে নেমে আসে নিরবতা। গণহত্যা শেষে পাক হানাদার বাহিনী মিলের দক্ষিণ পাশের দেয়াল ভেঙে পালিয়ে যায়। শহীদদের মরদেহ পড়ে ছিল মিলের সুপারি বাগানে। ভয় ও আতঙ্কে কেউ কাছে যাওয়ার সাহস পায়নি। ফলে মরদেহগুলো শেয়াল-শকুনের খাদ্যে পরিণত হয়। স্বাধীনতার পর এলাকাবাসী মিল চত্বরে প্রবেশ করে বিকৃত অবস্থায় ১০৩ জন শহীদের মরদেহ উদ্ধার করেন। তারপর মিলের দক্ষিণ পাশে কবর খুঁড়ে একসঙ্গে শহীদদের সমাহিত করেন তারা।
শহীদদের স্মরণে মিল কর্তৃপক্ষ নির্মাণ করেন একটি স্মৃতিস্তম্ভ ‘শহীদের স্মরণে ১৯৭১’। গণকবরের পাশেই পরবর্তীতে গড়ে ওঠে একটি পাকা মসজিদ।