লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে ইতালিতে গমনেচ্ছুক বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার ৩৯ জন যুবক ও একজন দালালকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে ৩৬ জন গৌরনদী ও তিনজন আগৈলঝাড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা এবং একজন দালাল চক্রের সদস্য।
সোমবার (পহেলা ডিসেম্বর) দুপুরে আটককৃত যুবকদের স্বজনরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আটক হওয়া এক যুবকের মা জেসমিন খানম বলেন, লিবিয়ার একদল পুলিশ বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) দিবাগত রাত একটার দিকে বেনগাজি’র সিটি খলিফা এলাকায় অভিযান চালিয়ে গেইমঘর থেকে দালাল চক্রের এক সদস্যসহ মোট ৪০ জনকে আটক করেছে। এরমধ্যে আমার ছেলেসহ আটককৃত সকল যুবকদের পাসপোর্ট ও মোবাইল ফোন জব্ধ করেছে লিবিয়ার পুলিশ।
তিনি আরও জানিয়েছেন-শনিবার দিবাগত রাতে কৌশলে অপর একটি মোবাইল ফোন দিয়ে আটক হওয়ার বিষয়টি আমার ছেলে আমাকে জানিয়েছে। এরপর থেকে আমরা উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। জেসমিন খানম বলেন, এরপূর্বে আমার ছেলে লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পথে ইতালি যাওয়ার সময় গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে লিবিয়ার কোস্টগার্ডের হাতে আটক হয়েছিলো। আটকের ২৭ দিন পর দালাল জাকির মোল্লা আমার ছেলেসহ অপর আটককৃতদের ছাড়িয়ে দালাল চক্রের অপর এক সদস্যর জিম্মায় রেখেছিলেন। এবারও আটকৃতদের কারাগার থেকে জাকির মোল্লা ছাড়াবেন বলে আমাদের আশ্বাস্ত করেছেন।
আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে মানব পাচার চক্রের সদস্য গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ডুমুরিয়া গ্রামের ইতালি প্রবাসী মো. জাকির মোল্লা জানিয়েছেন, যতোবার আটক হবে, ততোবারই নিজের টাকা দিয়ে তাদের ছাড়িয়ে আনবো। এরপর গেম দিয়ে ইতালি পাঠাবো। এলাকার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ পথে ইতালি যেতে চায় বলেই আমি তাদের পাঠাই।
উল্লেখ্য, এরপূর্বে লিবিয়ার কারাগারে বন্দি যুবকদের কয়েকজন অভিভাবক জানিয়েছেন-ঋণ, ধারদেনা ও জমি বিক্রি করে মানব পাচারকারী দালালচক্রের সদস্য গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ডুমুরিয়া গ্রামের ইতালি প্রবাসী জাকির হোসেন মোল্লার মধ্যস্থতায় বগুড়ার বাসিন্দা ইতালি প্রবাসী সাজু এবং কুষ্টিয়ার লিটনের কাছে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ার এসব যুবকরা প্রতিজনে ১৫ থেকে ১৮ লাখ টাকা করে দিয়ে ভূমধ্যসাগর হয়ে ইতালির পথে পা বাড়িয়েছিলেন। দালাল জাকির লিবিয়ায় অবস্থানরত তার সহযোগিদের মাধ্যমে বেনগাজি থেকে প্রথমে গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে প্রথম বোটে গৌরনদীর ৩৮ জন যুবক এবং দ্বিতীয় বোটে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ার ২২ জন যুবককে গত ২২ সেপ্টেম্বর রাতে একইস্থান থেকে ভূমধ্যসাগর পথে ইতালির উদ্দেশে পাঠায়। কিন্তু দুইটি বোটই লিবিয়ার কোস্টগার্ড আটক করেছিলো। আটকের ২৭ দিন পর দালাল জাকির মোল্লা আটককৃতদের ছাড়িয়ে দালাল চক্রের অপর এক সদস্যর জিম্মায় রেখেছিলেন। তাদের মধ্যে পুনরায় ৪০ জনকে গত ২৭ নভেম্বর দিবাগত রাতে ভূমধ্যসাগর পথে ইতালিতে পাঠানোর পূর্বে বেনগাজি’র সিটি খলিফা এলাকায় অভিযান চালিয়ে গেইমঘর থেকে দালাল চক্রের এক সদস্যসহ মোট ৪০ জনকে আটক করেছে লিবিয়ার পুলিশ।