নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার জমিদারহাট সংলগ্ন পশ্চিম লাউতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে চলছে আমানিয়া ব্রীকস এর ইটভাটা ও সেনবাগ উপজেলার ইয়ারপুর গ্রামে সোনালী ব্রিকস নামের অবৈধ দুইটি ইট ভাটা।তামান্না নামের ইট ভাটার কার্যক্রম মালিক পক্ষের দ্বন্দ্বের কারণে এবার বন্ধ রেখেছে কতৃপক্ষ। এসব অবৈধ ইট ভাটার দাপটে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে গ্রামটি। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অবৈধ ইট ভাটায় ইট পোড়ানোর কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন ল একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি শ্রেণী কক্ষ। শিক্ষকরা শ্রেণী কক্ষের দরজা জানালাগুলো বন্ধ করে ক্লাস নিলেও মিলছে না নিস্তার। শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ধোঁয়া এবং গন্ধের কারণে সবসময় শিক্ষার্থীদের হাঁচি, কাশি লেগে থাকে। ফেব্রুয়ারি মার্চের দিকে পরিস্থিতি ভয়াবহতা উল্লেখ করে বলেন,ইট ভাটার জন্য মাটির ট্রাকগুলো গণহারে আসা যাওয়ার কারণে পুরো গ্রামের রাস্তা গুলো মনে হয় যেন ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। আসলে ধুলোয় আচ্ছন্ন থাকে।রাস্তাঘাটে চলাচল দুষ্কর হয়ে পড়ে।তখন বাচ্চারা আর ক্লাসে আসতে পারে না।
শিক্ষা লাভের আশায় ভর্তি হওয়া গ্রামের শিশুদের বিকল্প বিদ্যালয় না থাকায় বাধ্য হয়ে বিদ্যালয়ে আসতে হয় বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষক ও এলাকাবাসী। তারা হতাশা প্রকাশ করে বলেন,বিগত বছরগুলোতে এসব বিষয় নিয়ে বিদ্যালয় থেকে উপজেলা প্রশাসনে লেখালেখি হলেও কার্যকর কোনো ফল মেলেনি। যারা এই সব করে তাঁরা খুবই প্রভাবশালী মানুষ।’ যদি জানতে পারে তার নাম তাহলে জানে মেরে ফেলবে’। এ নিয়ে বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো: সালাউদ্দিন দৈনিক জনকণ্ঠ'র কাছে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন,”যা কিছু ঘটছে সেটা তো আপনারা দেখছেন”।
মোঃ আব্বাস নামের দোকানি জানান, বেপরোয়া মাটির গাড়ি,ধুলায় দূষণের শিকার হয়ে কয়েকবার সবাই মিলে সোনালী ব্রিকসের মালিক ওই গ্রামের বাসিন্দা মশিউর রহমান ভূইয়াকে জানালে তিনি আমাদের সাথে দূর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেন।বেশি কথা বললে অসুবিধা হবে বলে একাধিকবার হুমকি দিয়েছিলেন।অথচ পরিবেশ দূষণের হাত থেকে বাচাতে তিনি তাঁর পরিবারকে ঢাকায় রাখেন।এছাড়া তিনি ইট ভাটার লাভের অর্থ দিয়ে জেলা শহর মাইজদী নোয়াখালী ও ঢাকায় একাধিক বাড়ি গাড়ির মালিক বনে যান।নোয়াখালী পরিবেশ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়,এখানে হাফেজা ব্রিকস নামে একটি অবৈধ ইট ভাটা আছে।কিন্তু বাস্তবে আমানিয়া ব্রিকস নাম দিয়ে ২০২১ সাল থেকে জমিদার হাটের তারেক ও সাইফুল দুই ভাই বৈধ কোনো কাগজ পত্র ছাড়া ইট ভাটাটি চালিয়ে আসছেন।কাগজ পত্রে মেসার্স হাফেজা ব্রিকস উল্লেখ থাকলেও আমানিয়া নামে ইট ভাটার কোনো কাগজ পত্র দেখাতে পারেননি।এসময় ওই ভাটার মালিক সাইফুল মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতিবেদককে বিভ্রান্ত করার জোর চেষ্টা চালান। ইট ভাটা থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব আনুমানিক ২০০ মিটার।যেটা পরিবেশ আইন (২০১৩) সংশোধিত (২০১৯) স্পষ্ট লঙ্ঘন।১ হাজার মিটারের মধ্যে কোনো বিদ্যালয় থাকলে ইট ভাটা স্থাপন করা যায় না।এসব আইনকানুন ও নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের কোনোরূপ হস্তক্ষেপ ছাড়া বছরের পর বছর চলছে অবৈধ পরিবেশ বিধ্বংসী এসব ভাটা। পশ্চিম লাউতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৭২ ইংরেজিতে প্রতিষ্ঠিত হয়।খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, অবৈধ ইট ভাটাগুলো গত ১০ বছরেরও অধিকাল ধরে চলছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা: মরিয়ম সিমি বলেন, বিদ্যালয়ের পাশে ইট ভাটা স্থাপন অপরাধ। তিনি জানান,ইট ভাটা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় মারাত্মক বায়ু দূষণ ঘটায়।এতে রয়েছে ক্ষুদ্র কণা পদার্থ চগ ২.৫,চগ ১০, সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড,ক্যাডমিন,পারদ, বেনজিন,ফর্মালডিহাইড,ডাইঅক্সিন ইত্যাদি। এসব পদার্থ শিশু শিক্ষার্থীদের শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, কাশি,গলা ও চোখে জ্বালাপোড়া দেখা দেয়।দীর্ঘ মেয়াদি ক্ষতি ব্রংকাইটিস,শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, ফুসফুসের কার্যক্ষমতা হ্রাস করে ক্যানসার তৈরি করে। ক্ষুদ্র কণা চগ ২.৫ রক্তের সাথে মিশে গিয়ে রক্তচাপ বাড়ায়।যার ফলে হার্ট এ্যাটাক, স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। সীসা ও পারদের মতো ভারী ধাতু শিশুর বুদ্ধিমত্তা ও স্নায়ুবিক কার্যকারিতা হ্রাস করে। রক্তশূন্যতা, কিডনি রোগ,ত্বকের সমস্যা এবং সমস্যা হতে পারে।
এ বিষয়ে সেনবাগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরীন আক্তার বলেন,’বিষয়টি অতীব দু:খজনক।এতোদিন ধরে অবৈধ ইট ভাটাগুলো চলছে সেটা তো কেউই লিখিতভাবে জানায়নি”।তবে আমরা এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছি।ইতোমধ্যে আমরা অবৈধ ইট ভাটা মেঘনা ব্রিকস ভেঙে দিয়েছি।অন্যান্য অবৈধদের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
বেগমগঞ্জ উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা( ইউএনও)
মো: আরিফুর রহমান বদলি জনিত কারণে সদ্য যোগদান করা (ইউএনও) মো: কায়েসুর রহমান বলেন আমানিয়া নামের ইট ভাটার কাগজপত্র পর্যালোচনা করা হবে।অবৈধ হলে ভেঙে দেয়া হবে।পর্যায়ক্রমে সকল অবৈধ ইট ভাটা ভেঙে দেওয়া হবে।