ঐক্যের ভিত্তিতে দাবি আদায় করে সংসদে যেতে চায় ৮ দল

এফএনএস (সৈয়দ জাহিদুজ্জামান; দিঘলিয়া, খুলনা) : | প্রকাশ: ২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১০:২৫ এএম
ঐক্যের ভিত্তিতে দাবি আদায় করে সংসদে যেতে চায় ৮ দল

পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করা ৮ দল সোমবার (১ ডিসেম্বর) বিকালে খুলনা মহানগরীর শিববাড়ী বাবরী চত্বরে বিভাগীয় সমাবেশ করেছে। এ সমাবেশে দলগুলোর নেতারা তাদের দলীয় ঐক্যের প্রতি জোর দিয়ে দাবি আদায়ের কথা বলেছেন। ঐক্যের ভিত্তিতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে তারা সংসদে যেতে চায়। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডাঃ শফিকুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোঃ রেজাউল করিম।

সমাবেশে জামায়াতের আমির ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন, ‘ইসলামী দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই ঐক্য আমাদেরকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত নিয়ে যাবে। প্রয়োজনে আরও একবার ৫ আগস্ট সংঘটিত হবে।’চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোঃ রেজাউল করিম বলেছেন, ‘অনেকে বলেন আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত নই। কিন্তু আমরা নির্বাচনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তত। কিন্তু তারাই ফেব্রুয়ারীর নির্বাচন নিয়ে হিসাব-নিকাশ করে দেখেছেন তাদের পায়ের তলায় মাটি সরে গেছে। এবার নির্বাচন নিয়ে আপনারাই ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। গুন্ডামী করে, সেন্টার দখল করে, সন্ত্রাসী চালিয়ে ক্ষমতার চেয়ারে বসবেন। সেদিন ভুলে যান। সে সুযোগ আর আপনারা পাবেন না।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘জুলাই বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশে দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশ আজ দুই ভাগে বিভক্ত। ৭২-এর বাকশালপন্থি আর একভাগ, ২০২৪ সালের বিপ্লবপন্থি শক্তি।’

তিনি বলেন, ‘রক্তের সাগর পেরিয়ে ২৪-এর জুলাই বিপ্লবের পর যেই ফ্যাসিবাদ বিতাড়িত করা হয়েছে, সেই ফ্যাসিবাদ বাংলার মাটিতে আসবে না। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি কার্যকরে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম। জুলাই সনদকে চূড়ান্ত আইনি ভিত্তি দিতে গণভোটের আয়োজন করতে হবে। একসঙ্গে তালগোল পাকিয়ে এই মাহাত্মকে নষ্ট করবেন না। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন করা হোক। ব্যর্থ হলে ইন্টেরিম সরকার ইতিহাস আপনাদের ক্ষমা করবে না। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। কলঙ্ক নিয়ে আপনাদেরও বিদায় নিতে হবে। বাংলার মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। দলীয় প্রতীকে ভোট দেওয়ার পাশাপাশি হ্যাঁ ভোটের বাক্স ভরতে হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনও অনিশ্চয়তা দেখা দিলে সরকারকে তার দায় নিতে হবে।’ তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।বিশেষ অতিথির বক্তব্যে খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতায় থেকে দেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছে। তারা চেয়েছিল ৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে। ৮ দল ক্ষমতায় গেলে চাঁদাবাজ থাকবে না। জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, এটাকে কেউ ভাঙতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ নেজামী ইসলামের মহাসচিব মুফতি মুসা বিন ইজহার বলেন, ‘খান জাহান আলীর শহর খুলনা, রূপালী শহর খুলনা। যারা সংস্কারের বিরুদ্ধে থাকবে, আগামী নির্বাচনে জনগণ তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করবে। যারা এ দেশে শরিয়া আইন চায় না তাদের লাল কার্ড দেখাবে। সিসা ঢালা এই ঐক্য ধরে রেখে আমরা ইসলামী সংসদ গড়ে তুলবো।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদেক হক্কানী বলেন, ‘এ দেশের সংবিধান হবে আল্লাহর কুরআন। সংসদে হবে কোরআনের আইন। যেকোনও ষড়যন্ত্র আমরা মোকাবিলা করবো। মানুষকে বোঝাতে হবে আল্লাহর আইন ছাড়া শান্তি সম্ভব না।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান বলেছেন, ‘যারা বলেছিলেন, ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিবকে খুলনায় আসতে দেবে না। তারা এসে দেখে যান বাবরী চত্বর ইসলামী দলে ভরে উঠেছে। জাতীয় নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। ৫ আগস্টে জনগণ দেখেছে এ দেশের জনগণ হিন্দুত্ববাদ কায়েম করতে চায় না। বাংলাদেশের জনগণ চাঁদাবাজি দেখতে চায় না। গণভোটকে হ্যাঁ বলুন, ৮ দলের প্রতিকে সিল মারুন।’বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট পার্টি বিডিপির চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন বলেন, ‘জুলাই মানে অকাতরে সংগ্রাম করে জীবন দিতে হবে না। আমরা দেশদ্রোহীদের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছি। এ দেশের মানুষ অন্য দেশের দালালি করতে চায় না। মানুষ দালালি নয় মুক্তি চায়।’

সমাবেশে স্থানীয় নেতারা বলেন, যারা এ দেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চায়, তাদের গ্রহণ করা হবে নাকি বর্জন করা হবে- এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ৮ দলীয় জোট মাঠে একত্র হয়ে কাজ করতে পারলে আগামীর বাংলাদেশ হবে শান্তির, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ। ৮ দলের দাবির পক্ষে জনগণ এক হয়েছে। হকের পথে জিহাদ ও সাধনা চালিয়ে যেতে হবে। হক আদায়ে আগামী নির্বাচনে মাঠে নামতে হবে। ৮ দল মিলে আগামী দিনগুলোতে দেশ শাসন করবে ইনশাআল্লাহ। চূড়ান্ত বিজয়ের লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। জাতীয় সংসদে মজলুম মানুষের পক্ষে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এখন যারা চাঁদাবাজি ও দখলবাজির শিকার তাদের মুক্তির জন্য ৮ দলকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনতে হবে।

একসঙ্গে আন্দোলন করা ৮ দল হলো- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি।

এ দলগুলো ৫ দাবি হলো- জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গণভোট আয়োজন, নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা, আওয়ামী সরকারে বিচার দৃশ্যমান করা, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে