চিলমারী ফেরিঘাটে অচলাবস্থা, দুই বছরে চলেছে ৪০৬দিন

এফএনএস (মোঃ সিদ্দিকুল ইসলাম সিদ্দিক; চিলমারী, কুড়িগ্রাম) : | প্রকাশ: ২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০১:৫৫ পিএম
চিলমারী ফেরিঘাটে অচলাবস্থা, দুই বছরে চলেছে ৪০৬দিন

উত্তরাঞ্চলের অন্যতম সম্ভাবনাময় নৌপথ চিলমারী-রৌমারী রুটে ফেরি চলাচল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। গত ২ বছরে (২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩থেকে ২০২৫ অক্টোবর) ফেরি চলেছে মাত্র ৪০৬ দিন।বাকি ৩৬৮ দিন ফেরি বন্ধ থাকায় চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে যাত্রী ও চালকদের। ফলে বিকল্প পথে ঘুরে যাতায়াতে বাধ্য হচ্ছেন পরিবহন চালকরা। এতে সময়, খরচ এবং ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষক, ব্যবসায়ী ও পরিবহন মালিকরা।ঘাট সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্য সংকট, অন্যদিকে ঘাট ব্যবস্থাপনার স্থবিরতায় ফেরি সার্ভিস কার্যকরভাবে চালু রাখা যাচ্ছে না। বারবার ড্রেজিং করেও লাভ হচ্ছে না। উজানের ঢলে পলি পড়ে দ্রুত চর জেগে উঠছে, আর বর্ষাকালে দেখা দিচ্ছে ভাঙন।’বিআইডব্লিউটিএর তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর চিলমারী-রৌমারী রুটে ফেরি সার্ভিস উদ্বোধনের পর থেকে এই রুটে কুঞ্জলতা ও বেগম সুফিয়া কামাল নামের দুটি ফেরি যুক্ত করা হয়। পরে বেগম সুফিয়া কামাল নামের ফেরি সরিয়ে কদম নামের আরেকটি ফেরি ঘাটে যুক্ত করা হয়। এরপর থেকে ফেরি কুঞ্জলতা ও কদম নিয়মিত পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী গাড়ি পারাপার করছে।চিলমারী ঘাটের লিপিবদ্ধ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ফেরি চালু হওয়ার পর এই বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১০৪ দিনে ফেরি চলেছে ৯৭ দিন। এই সময়ে গাড়ি পারাপার হয়েছে ২ হাজার ৮৮৫ টি। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ বছর অর্থাৎ ৩৬৫ দিনের মধ্যে ফেরি চলেছে ২৪১ দিন। এই সময়ে গাড়ি পারাপার হয়েছে ৬ হাজার ৫৬২ টি। এবং২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২১৮ দিনের মধ্যে ফেরি চলেছে মাত্র ৬৮ দিন।এই সময়ে গাড়ি পারাপার হয়েছে মাত্র ২ হাজার ২৫০ টি। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ফেরি চালুর বছরে ১০৪ দিনের মধ্যে মাত্র ৭ দিনে বন্ধ ছিল।কিন্তু ২০২৪ সাল থেকে শুরু হয়েছে বিড়ম্বনা। এ বছরে ফেরি চলেছে ২৪১ দিন, বন্ধ ছিল ১২৫দিন। তবে এ বিড়ম্বনা আরো বেড়েছে ২০২৫ সালে। এ বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত ফেরি চলেছে২১৮ দিনের মধ্যে মাত্র ৬৮ দিন।বিআইডব্লিউটিএ’র চিলমারী ফেরি ঘাটের ম্যানেজার প্রফুল্ল চৌহান বলেন,‘ফেরি নিয়মিত চালু রাখতে না পারলে তো বিড়ম্বনা রয়েছে। তবে আমরা বন্ধের আগের দিনপার্শ্ববর্তি জেলাগুলোর মটর মালিক সমিতিকে অবহিত করে দেই।’রেল, নৌ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণ কমিটির সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি নাহিদ হাসান বলেন, ‘এই ঘাটে সমস্যা দীর্ঘদিনের। ঘাট কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হলেও কোনোস্থায়ী সমাধান হয়নি। ফলে চালকরা এই রুটকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন। চিলমারী ঘাটের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ রুটকে সচল রাখতে হলে সাময়িক সমাধান নয়, দরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও বাজেট বরাদ্দ।’

মটর শ্রমিক ইউনিয়নের চিলমারী উপজেলা শাখার সভাপতি মো. সোহেল মিয়া বলেন, ‘চিলমারী ফেরিঘাট অচল থাকায় যাত্রী ও পণ্য পরিবহন উভয়খাতেই বড় ক্ষতি হচ্ছে। বিকল্প পথে ঘুরে যেতে সময় ও খরচ দুটোই বাড়ছে। এর প্রভাব পড়ছে কৃষি ও ব্যবসার ওপর।’তিনি আরও বলেন,‘ব্রহ্মপুত্র নদের এই অংশে নিয়মিত নাব্য সংকট দেখা দেয়। ঘাট এলাকায় নিয়মিত ড্র্রেজিং কিংবা বিকল্প নৌপথ উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া না হলে এই সমস্যা কাটবে না।’ বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বলেন,‘চিলমারী ফেরি পথ প্রায় ২৭ কি.মি, বাংলাদেশে এতো বড় পথ আর কোথাও নেই। ফেরি চলাচল নিয়মিত করতে অব্যাহত ড্রেজিং প্রয়োজন। কিন্তু স্থানীয়রা তাদের পাড় ভেঙ্গে যাওয়ার শঙ্কায় প্রায়শই ড্রেজিং করতে দেন না।’তিনি আরো জানান, ‘বর্তমানে সরকারি ভাবে দুটি ড্রেজার ও বেসরকারি ভাবে দুটিসহ

মোট চারটি ড্রেজার ফেরিরুট চালু রাখতে কাজ করছে, ড্রেজারের সংখ্যা আরো বাড়ানো গেলে ফেরিরুট নিয়মিত চালু রাখা যাবে।’

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে