রাজশাহীতে প্রান্তিক মানুষ নিয়ে মতবিনিময় সভা

গ্রাম আদালত কার্যকর হলে কমবে মামলা জট, দ্রুত বিচার পাবে বিচারপ্রার্থীরা

এম এম মামুন; রাজশাহী | প্রকাশ: ২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৪:১১ পিএম
গ্রাম আদালত কার্যকর হলে কমবে মামলা জট, দ্রুত বিচার পাবে বিচারপ্রার্থীরা
গ্রাম আদালত কার্যকরভাবে পরিচালিত হলে উচ্চ আদালতের ওপর থেকে মামলা জট কমবে এবং স্বল্প খরচে ও স্বল্প সময়ে ন্যায়বিচার পেতে সক্ষম হবেন বিচারপ্রার্থীরা। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকালে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘গ্রাম আদালত ব্যবস্থা’ শীর্ষক সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এ বক্তব্য তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্প। সভায় জানানো হয়, প্রকল্পের আওতায় জেলার ৯টি উপজেলার ৭২টি ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালত কার্যক্রম চলছে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলায় ৬ হাজার ১৬৬টি মামলা দায়ের হয়েছে, যার মধ্যে ৫ হাজার ৯৬৫টি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। নারী মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে এক হাজার ৬৫১টি। এ সময় সাত কোটি ৬৩ লাখ ৪৪ হাজার ৩৯৩ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছে এবং প্রায় এক হাজার ৫৭ শতক জমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য পাঁচ কোটি ২ লাখ টাকা। গ্রাম আদালত তিন লাখ টাকার নিচের দেওয়ানী ও ফৌজদারী বিরোধ নিষ্পত্তির এখতিয়ার রাখে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার বলেন, “দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যাতে কম সময় ও কম খরচে তাদের বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারে—গ্রাম আদালত সে সুযোগ তৈরি করছে। গণমাধ্যমের ইতিবাচক প্রচারণা জনগণকে আরও সচেতন ও উৎসাহিত করবে।” তিনি জানান, গ্রাম আদালত আরও শক্তিশালী করতে অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, সচেতনতা বৃদ্ধি ও নিয়মিত মনিটরিং জোরদার করা হচ্ছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মো. জাকিউল ইসলাম। তিনি বলেন, “গ্রামের ছোটখাটো অপরাধ বা বিরোধের বেশিরভাগই গ্রাম আদালতের এখতিয়ারভুক্ত। সচেতনতার অভাবে অনেকেই থানা বা জেলা আদালতে দৌড়ান— এতে সময়-অর্থ দুটোই অপচয় হয়। এসব বিষয়ে গণমাধ্যম কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।” গ্রাম আদালত প্রকল্পের জেলা ব্যবস্থাপক মো. লুৎফর রহমান বলেন, গ্রাম আদালতের সুবিধা জনগণের মাঝে আরও সহজভাবে পৌঁছে দিতে গণমাধ্যমের সহযোগিতা জরুরি। একই সঙ্গে প্রকল্পের জাতীয় সমন্বয়ক বিভাষ চক্রবর্তী ও লিগ্যাল এনালিস্ট অ্যাড. মশিউর রহমান চৌধুরী আইনি কাঠামো ও আদালতের কার্যপ্রক্রিয়া তুলে ধরেন। তারা জানান, গ্রাম আদালত আইন ২০০৬ অনুযায়ী পাঁচ সদস্যের প্যানেল দ্বারা পরিচালিত হয় এবং ৯০ দিনের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি করা বাধ্যতামূলক—সর্বোচ্চ সময় ১২০ দিন। এছাড়া বক্তব্য দেন ইএসডিও’র প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মারুফ আহমেদ। গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ‘আমাদের রাজশাহী’ পত্রিকার সম্পাদক আফজাল হোসেন, ‘নতুন প্রভাত’ সম্পাদক সোহেল মাহবুব, সাংবাদিক আবরার শাইর, সিনিয়র সাংবাদিক আইনুল হক, ফারুক হোসেন, রাজিব হোসেন, ডালিম হোসেনসহ অন্যরা। বক্তারা বলেন, গ্রাম আদালত একটি কার্যকর ও জনগণবান্ধব ব্যবস্থা, যা প্রচলিত আদালতের ওপর চাপ কমিয়ে বিচারব্যবস্থাকে আরও গতিশীল করতে পারে। গণমাধ্যমের ধারাবাহিক প্রচারণার মাধ্যমে এ ব্যবস্থাকে সারাদেশে আরও জনপ্রিয় করা সম্ভব।
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে