ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সোমবার (১ ডিসেম্বর) গভীর রাতে অনুভূত হওয়া ভূমিকম্পের পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বঙ্গোপসাগরেও আরেকটি কম্পন ধরা পড়েছে। রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে প্রথম ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়, আর পরেরটি ধরা পড়ে মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ৭টা ৫৬ মিনিটে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, দুটি ভূমিকম্পই মধ্যম মাত্রার হলেও উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানায়, রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে হওয়া ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের মিনজিন এলাকা, রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ৪ দশমিক ৯। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যে বলা হয়েছে, এর কেন্দ্রস্থল ছিল ঢাকা থেকে প্রায় ৪৩১ কিলোমিটার দূরে। ফলে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েক সেকেন্ডের জন্য ঝাঁকুনি অনুভূত হয়।
এই রাতের কম্পনের পর সকালেই আবার ভূমিকম্প আঘাত হানে বঙ্গোপসাগরে। ভারতের ভূবিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জাতীয় ভূকম্পন কেন্দ্র জানায়, বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টা ৫৬ মিনিটে ৪ দশমিক ২ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়। টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন বলছে, কেন্দ্রস্থল ছিল ২০.৫৬ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২.৩১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে, গভীরতা প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি।
উপকূলীয় কম্পনের বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে বেশ কিছু সক্রিয় ফল্টলাইন রয়েছে, যা নিয়মিত ছোট মাত্রার ভূকম্পন তৈরি করে। সাম্প্রতিক কয়েক দিনের ধারাবাহিক কম্পন নিয়ে তারা সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। ভূমিকম্প গবেষকেরা মনে করছেন, “এ ধরনের ছোট মাত্রার ভূকম্পন বড় ধরনের চাপ নিরসনে ভূমিকা রাখলেও দীর্ঘমেয়াদে সক্রিয় অঞ্চলগুলোতে পর্যবেক্ষণ আরও জোরদার করা জরুরি।”
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই দেশে ভূমিকম্পের প্রবণতা বেড়েছে। ২১ নভেম্বর সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী কম্পনে কেঁপে ওঠে ঢাকাসহ দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা, যার উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদীতে। ওই ভূমিকম্পে বেশ কিছু ভবনে ফাটল ধরার পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া ২২, ২৩ ও ২৬ নভেম্বরও দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃদু ভূকম্পন অনুভূত হয়।
সাম্প্রতিক এই ধারাবাহিকতার কারণে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে আরও প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, জনগণের মধ্যে ভূমিকম্প সচেতনতা ও বিল্ডিং সেফটি নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।