ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেছেন-আপনারা বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টির শাসন দেখেছেন। একবারের জন্য হলেও এবার ইসলামপন্থিদের সুযোগ দিন। আমরা একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্র উপহার দেব ইনশাআল্লাহ। ইসলামপন্থীরা ক্ষমতায় গেলে কোনধরনের চাঁদাবাজি, অবিচার, খুনাখুনি, গুন্ডামী, দখলবাজি থাকবেনা। দেশের টাকা বিদেশে পাচার হবেনা। আর কোন মায়ের কোল খালি হবেনা।
পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনরত আট দলের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) বরিশাল নগরীর ঐতিহাসিক বেলস পার্ক মাঠে বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশে পীর সাহেব চরমোনাই আরও বলেছেন-আজকের সমাবেশ থেকে আমি বিশেষ করে যারা ক্ষমতা প্রেমিক রয়েছেন, যারা বিভিন্ন সময়ে মুখরোচক কথার মাধ্যমে ধোকা দিয়ে ক্ষমতার চেয়ারে বসে হাজার হাজার মায়ের বুক খালি করেছে, বাংলাদেশের টাকা পাচার করে বিদেশে বেগমপাড়া করেছে, চোরের দিক থেকে বারবার যারা চ্যাম্পিয়ান হয়েছে তাদেরকে ম্যাসেজ দিতে চাই। তাদের যায়গা আর বাংলার মাটিতে হবেনা, তাদেরকে উৎখাত করতে হবে। যারা বাংলাদেশের পরিবেশকে অশান্ত করার পায়তারা করছে, তাদের যায়গা বাংলাদেশে আর হবেনা। আমরা এদেশকে মুক্ত করার জন্য রাজপথে আন্দোলন করে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেছি। কিন্তু চাঁদাবাজি দেখার জন্য, মানুষ খুন হবে এটা দেখার জন্য রাস্তায় নামিনি।
মঙ্গলবার দুপুর বারোটা থেকে শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত চলমান সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, আমাদের দেশ নিয়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চলছে। আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিত হবে। যারা ক্ষমতায় গিয়ে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে তাদেরকে এদেশে আর কোনদিন সুযোগ দেওয়া হবেনা। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, স্টেশন দখলের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে স্পষ্ট ভাষায় বলছি, আপনাদের পায়ের নিচের মাটি সরে গেছে। এখনো আপনারা পরিবর্তন হয়ে যান। ৫৩ বছর দেখেছি, আর নয়। বারবার ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আমাদের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, এবার আর তা হবেনা। অতীতে উন্নয়ন ও মানবতার কথা বলে মানবতাকে জবাই করেছেন, উন্নয়নের নামে বিদেশে বেগমপাড়া করেছেন। এবার আর ছিনিমিনি করার সুযোগ নেই। বাংলার জমিনে আর চাঁদাবাজদের জায়গা হবেনা।
কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারন করে পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন-হাসিনাও বলেছিলো যে “শেখ হাসিনা পালায়না” কিন্তু তিনি রান্না করা খাবার খেয়েও যেতে পারেনি। এই থেকে দেশের সবার শিক্ষা নিতে হবে। সুতরাং নির্বাচন নিয়ে কেউ ছিনিমিনি করার চেষ্টা করলে হাসিনার মতো পরিনতির জন্য তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। সবশেষে পীর সাহেব চরমোনাই বেগম খালেদা জিয়া এবং জামায়াতে ইসলামীর নেতা আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ তাহেরের সুস্থতা কামনা করেন।
বিভাগীয় সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, আমরা অনেকে আগে পীর পছন্দ করতাম না। আমিও ছাত্রজীবনে এমনটা মনে করতাম। কিন্তু আজকে চরমোনাই পীর সাহেবের পাশে বসে মনে হলো তিনি শুধু পীর নয়; তিনি এদেশের ইসলাম প্রতিষ্ঠার একজন মহাবীর। আমরা আটদল ঐক্যবদ্ধ হয়েছি ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য। আল্লাহতায়ালা কুরআনে দুইটা দলের কথা বলেছেন। একটা হলো হিজবুল্লাহ আরেকটা হিজবুশ শয়তান। সুতরাং আমরা আল্লাহর দলে থাকতে চাই। আসুন আমরা একসাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কুরআনের আইন চালু করি। আমরা মানবরচিত আইনের সংবিধান দেখতে চাইনা। মদিনার ইসলাম কায়েম করতে চাই। সংস্কারের মাধ্যমে আমরা সংবিধান থেকে ইসলামবিরোধী ধারা বাতিল করতে চাই।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান আরও বলেছেন, একটি দলকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে কিন্তু তাদেরকে যারা সহযোগিতা করেছে তাদেরকেও নিষিদ্ধ করতে হবে। সবশেষে তিনি আট দলকে আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে বিজয়ী করার জন্য সর্বস্তরের ভোটারদের কাছে আহবান করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই বলেছেন, বাংলাদেশে ইসলামী হুকুমত কায়েম হলে দেশের সর্বস্তরের মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে। কেউ খাবে তো, কেউ খাবেনা তা হবে না ইনশাআল্লাহ। ইসলামী হুকুমত হলে এদেশে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাই স্বাধীনভাবে বসবাস, ব্যবসা বাণিজ্য ও ধর্মীয় আচার পালন করবে।
তিনি আরও বলেন, ইসলামী হুকুমত হলে দেশের সবাই একসাথে হাসবো এবং কাঁদবো। যদি খেয়ে থাকি তবে একসাথে খাবো, আর না খেয়ে থাকলে সবাই একসাথে না খেয়ে থাকবো। আজকের এ সমাবেশ দেখে কেবল জালিম ও চাঁদাবাজরাই নাখোশ হতে পারে, মুক্তিকামী মানুষ আশার আলো দেখবে ইনশাআল্লাহ।
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি ও উক্ত আদেশের উপর প্রণীত গণভোট আয়োজনসহ পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইসলামী ও সমমনা আটদলের বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন-ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব মুফতী সৈয়দ এছহাক মুহাম্মাদ আবুল খায়ের, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট মুয়াযযম হোসাইন হেলাল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, খেলাফত মজলিসের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল বাসির আজাদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা সরওয়ার কামাল আজিজী, মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীর মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন, জেনারেল সেক্রেটারি নিজামুল হক নাঈমসহ আটদলের শীর্ষ ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দরা।