সারাদেশের মতো পাবনার চাটমোহরেও চলছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকদের কর্মবিরতি। এরই মধ্যে চলছে তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন (বার্ষিক) পরীক্ষা। স্কুলের নৈশপ্রহরী কাম পিয়ন ও অভিভাবকদের সহায়তায় পরীক্ষা পরিচালনা করছেন প্রধান শিক্ষকরা। পাবনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফুল কবির,সহকারি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আতাউর রহমান মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) চাটমোহর উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অভিভাবকরা। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) উপজেলার মুলগ্রাম ইউনিয়নের অমৃতকুন্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়,পরীক্ষার কক্ষগুলোতে দায়িত্ব পালন করছেন দুইজন অভিভাবক,স্কুলের পিয়ন আর প্রধান শিক্ষক কাজী রবিউল ইসলাম। উপজেলার বোঁথর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিদ্যালয়েও একই দৃশ্য দেখা গেছে। আন্দোলনরহ সহকরী শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে আসলেও আড্ডা দিয়ে,গল্প গুজবে সময় পার করছেন।
দেশের ‘সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা ১১তম গ্রেডসহ তিন দফা দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেছেন সোমবার থেকে। দাবি বাস্তবায়নে অগ্রগতি না হওয়ায় তারা বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। জটিল পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা যাতে বিঘ্নিত না হয়,সে জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অমৃতকুন্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পাবনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি কাজী রবিউল ইসলাম বলেন,“আমরা অভিভাবককে সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষা পরিচালনা করছি। সহকারী শিক্ষকরা তাদের কর্মসূচিতে থাকায় এই মুহূর্তে বিকল্প উপায় নেই। পরীক্ষা নিতে অংশ নেওয়া অভিভাবক মোখলেসুর রহমান ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন,‘শিক্ষকেরা পরীক্ষা নেবেন না জানানোয় আমরা অভিভাবকেরাই এগিয়ে এসেছি। যাতে বাচ্চাদের কোনো সমস্যা না হয়। তবে তাদের এ কর্মসূচি বন্ধ করা উচিত,তারা তো বছরে অনেকদিন ছুটি খায়,তারপরও দায়িত্ব পালনে অবহেলা রয়েছে। এখন আবার বেতন বাড়ানোর আন্দোলন করছেন। শিক্ষার্থীদের দিকে তাদের কোন দায়িত্ব নেই বলে মনে হচ্ছে। পরীক্ষা নিতে আসা অভিভাবক শামীমা খাতুন,সাথী আকতার ও মল্লিকা খাতুন অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন,‘এ বিষয়টির সুরাহা দরকার। পরীক্ষার পর আন্দোলন করলেই ভালো হতো।’
অন্যদিকে কর্মবিরতিতে অংশ নেওয়া এক সহকারী শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,‘দাবিগুলো শুধু আশ্বাসের মধ্যে সিমাবদ্ধ আছে। প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।’
এ বিষয়ে পাবনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফুল কবির বলেন,‘সহকারী শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে থাকায় প্রধান শিক্ষক ও অভিভাবকদের সহযোগিতায় পরীক্ষাগুলো আয়োজনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আমি নিজেও প্রতিনিয়ত মনিটরিং করছি,যেন শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়। আজকে চাটমোহরে এসেছি। উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ আঃ গণি জানান,চাটমোহর উপজেলার ১৫৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একই পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কর্মবিরতি ও দাবি আদায়ের আন্দোলনের কারণে বিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষা গ্রহণে সমস্যা তো হচ্ছেই। আন্দোলন দীর্ঘায়িত হলে শিক্ষার্থীদের উপর এর প্রভাব পড়তে পারে।