চিকিৎসা কার্যক্রম জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেয় কিন্তু এর ফলে নানা বর্জ্য তৈরি হয়। এগুলোকে মেডিকেল বর্জ্য বা ক্লিনিক্যাল বর্জ্য বলা হয়। বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিটি করিডোরে প্রতিদিন জীবন রক্ষা করার সংগ্রাম চলছে। অথচ, এই জীবন রক্ষার কেন্দ্রগুলোতেই লুকিয়ে আছে এক নীরব ও মারাত্মক হুমকি- চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার চরম দুর্বলতা। প্রায় ১৮ কোটি মানুষের চিকিৎসা চাহিদা মেটাতে যেখানে স্বাস্থ্যব্যবস্থা হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে চিকিৎসা বর্জ্য নিরাপদ ব্যবস্থাপনার অভাব জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর এক গুরুতর বিপর্যয় ডেকে আনছে। এসব বর্জ্য পরিবহন এবং ব্যবস্থপনার কাজটি এমনভাবে করতে হবে যেন সংক্রমণ না ঘটে এবং পরিবেশ সুরক্ষিত থাকে। এটি অব্যবস্থপনার ফলে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। মেডিকেল বর্জ্যকে প্রাথমিক ভাবে দুভাগে ভাগ করা হয়ঃ ১. সাধারণ বর্জ্য ২.সংক্রামক বর্জ্য। মেডিকেলে উৎপাদিত মোট বর্জ্যের সাধারণ বর্জ্য প্রায় ৭৫-৮০℅ থাকে আর সংক্রামক বর্জ্য থাকে প্রায় ২৫-২০℅। যদি এসব সংক্রামক বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থপনা না করা হয় অর্থাৎ সাধারণ আর সংক্রামক বর্জের আলাদাভাবে ব্যবস্থাপনা বা শোধন না করা গেলে আমরা চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ব। তাই উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এই মেডিকেল বর্জ্য। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় ২০০ টন চিকিৎসা বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার মধ্যে ৪০ টনের বেশি সংক্রামক ও ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য। দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশের কোনো সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালেই এই বর্জ্যগুলো পৃথকভাবে সংগ্রহ, জীবাণুমুক্তকরণ এবং পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে নিষ্পত্তির কার্যকর ব্যবস্থা নেই। ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, রক্তমাখা গজ, সার্জিক্যাল মাস্ক থেকে শুরু করে প্যাথলজিক্যাল বর্জ্য পর্যন্ত সবকিছু একসঙ্গে মিশে যাচ্ছে সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে। ফলে, হাসপাতালগুলোই সংক্রমণের হটস্পটে পরিণত হচ্ছে। হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট সংক্রমণ বেড়ে চলেছে আশঙ্কাজনক হারে। সামপ্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে প্রায় ১২-১৫% রোগী হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট নতুন সংক্রমণে আক্রান্ত হন। এতে রোগীর চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, হাসপাতালের চাপ বাড়ছে এবং স্বাস্থ্যকর্মী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও আশেপাশের জনগণও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। শহরের বস্তি এলাকা এবং বর্জ্য ডাম্পিং সাইটগুলোতে শিশুরা পর্যন্ত এই বিপজ্জনক বর্জ্যের সংস্পর্শে এসে সংক্রমিত হচ্ছে। হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে না করা গেলে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে এবং আমরা চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ব। এজন্য স্ব স্ব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র আইসোলেশন সেন্টার গুলোর বর্জ্য ব্যবস্থপনা চালু করা দরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মেনে চলা অপরিহার্য। ভুলে গেলে চলবে না, নাগরিকদের স্বাস্থ্য নিয়ে অবহেলা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। ওয়ার্ডটিকে বাসযোগ্য করতে হলে বর্জ্য সংকট নিরসনে কোনো বিকল্প নেই।