পটুয়াখালীতে ভূমি অধিগ্রহণ ক্ষতিপূরণের অর্থ বিতরণে ভয়াবহ অনিয়ম ও কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। শেষ কর্মদিবসে সোয়া কোটি টাকার চেক ছাড় করে অন্য কর্মস্থলে বদলি হয়েছেন জেলা প্রশাসকের এলএ শাখার তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট মশিউর রহমান। এ ঘটনায় সহযোগী বড়বাবু হাবিবুর রহমান ও সার্ভেয়ার মজিবুর রহমান বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের ধুলেশ্বর মৌজায় পায়রা বন্দরের জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬১৪ দশমিক ৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এর আওতায় লতাচাপলী মৌজার এলএ কেস নং-২১/২০১৬-১৭, জেল নং-৩৪, এসএ খতিয়ান নং-১৭৯, ৩০১ ও ১০২ এর বিপরীতে ক্ষতিপূরণ বাবদ তিনটি পেমেন্ট কেসে ৬৫ লাখ ৪৫ হাজার ১৮ টাকা, ১৯ লাখ ৫২ হাজার ১৬১ টাকা এবং ২৮ লাখ ৬০ হাজার ১২৫ টাকা মিলে মোট ১ কোটি ১৩ লাখ ৫৭ হাজার ৩০৪ টাকা বরাদ্দ হয়।
দীর্ঘদিন স্থগিত থাকা মামলার শুনানি গত ২৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে আপত্তি প্রত্যাহারের শর্তে ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ দেন তৎকালীন ভূমি কর্মকর্তা। ৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার, তার শেষ কর্মদিবসে প্রকাশ্যে কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হলেও রাতের আঁধারে যোগসাজশে বিপরীত পক্ষকে চেক হস্তান্তর করা হয়।
ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করেন, বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও তাদের ন্যায্য পাওনা দেওয়া হয়নি। তারা জানান, শুনানিতে জমির দলিল ও খতিয়ান দেখার পর কর্মকর্তারাই বলেছিলেন টাকা তারা পাবেন। কিন্তু আপত্তি প্রত্যাহার করানোর পর হঠাৎ করে চেক অন্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ভুক্তভোগীরা প্রশ্ন তোলেন, রাতের আঁধারে কেন চেক বিতরণ করা হলো। তাদের দাবি, কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে টাকার অর্ধেক ভাগাভাগি করা হয়েছে। এর মূল হোতা বড়বাবু হাবিবুর রহমান ও সার্ভেয়ার মজিবুর রহমান বলে তারা উল্লেখ করেন
ভুক্তভোগীর আইনজীবী এডভোকেট মোঃ ফোরকান রতন জানান, তাকে আপত্তি প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তিনি সেই নির্দেশ মেনে নিলেও পরে তার মক্কেলদের জমির ক্ষতিপূরণ আটকে দেওয়া হয়। তিনি জানান, দলিল ও মালিকানার প্রমাণ দেখিয়েও তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তিনি তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট মশিউর রহমানকে ফোন করলে তিনি দায় এড়িয়ে যান এবং প্রধান সহকারী ও সার্ভেয়ারকে দায়ী করেন। এডভোকেট ফোরকান রতনের দাবি, শেষ কর্মদিবসে এভাবে কোটি টাকার বেআইনি চেক ছাড় স্পষ্ট দুর্নীতির উদাহরণ, যা তদন্ত সাপেক্ষে ক্ষতিগ্রস্তদের পাওনা ফেরত দিতে হবে।
এলএ শাখার প্রধান সহকারী হাবিবুর রহমান জানান, তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করেছেন। কোর্টে বসে যে আদেশ দেওয়া হয়েছে, সেটিই কার্যকর করা হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অভিযুক্ত এলএও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মশিউর রহমানের সাথে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. মোঃ শহীদ হোসেন চৌধুরী বলেন,আমি এলও শাখার বিষয় অবগত আছি।দায়িত্ব গ্রহণের পর অনেক সংস্কার মূলক কাজও করেছি আপনি খোজ নিয়ে দেখতে পারেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার যদি আমার বরাবর লিখিত অভিযোগ করে তাহলে আমি আইনানুগ ব্যবস্থা নিব।