ভূমিকম্প ঝুঁকি মোকাবিলায় রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে নেয়া আরবান রিজিলিয়েন্স প্রকল্প দেশের নগর নিরাপত্তায় এক যুগান্তকারী উদ্যোগ হওয়ার কথা ছিল। ৫৬৮ কোটি টাকার এই প্রকল্পে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে, নির্মিত হয়েছে ১০ তলা গবেষণা ও পরীক্ষাগার ভবন, প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে দেশি প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর যা ঘটছে, তা দুর্ভাগ্যজনক অব্যবস্থাপনার এক নগ্ন উদাহরণ। ৬০ কোটি টাকার বিশেষায়িত যন্ত্রপাতি তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে-বেশির ভাগের মোড়ক পর্যন্ত খোলা হয়নি। কিছু যন্ত্র ব্যাটারি ও সংবেদনশীল ডিভাইসনির্ভর; নিয়মিত ব্যবহারের অভাবে এগুলোর কার্যকারিতা নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি প্রবল। রাজধানীর ভবনগুলোর ভূমিকম্প প্রতিরোধ ক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য কেনা স্ক্যানার, সিপিটি টেস্টার, আলট্রা পালস ভেলোসিটি মেশিন-সবই অব্যবহৃত। এদিকে ১২৫ কোটি টাকায় নির্মিত ১০ তলা ভবনটিও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ পড়ে আছে; ধুলোবালিতে ভরে গেছে, ভবনের চারপাশে গজিয়েছে আগাছা। এমন অব্যবহারের দৃশ্য শুধু অপচয়েরই নয়, দায়বদ্ধতার ঘাটতিরও প্রমাণ। যে উদ্দেশ্যে এই প্রকল্প-আরবান সেফটি অ্যান্ড রিজিলিয়েন্স ইনস্টিটিউট (ইউএসআরআই)-গঠনের কথা ছিল, তা এখনো কার্যকর হয়নি। দক্ষ জনবল তৈরি করা হলেও তারা কর্মহীন। সরকারি বিনিয়োগে কেনা গাড়িগুলো ব্যবহার করছেন রাজউকের কর্মকর্তারা, কিন্তু যন্ত্রপাতি ও ভবন পড়ে আছে নিষ্ক্রিয়। প্রকল্প পরিচালক পর্যন্ত স্বীকার করছেন যে লক্ষ্যপূরণ হয়নি, যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। দুর্যোগ ঝুঁকি অর্থাৎ মানুষের জীবন-কোনোভাবেই অবহেলার জায়গা নয়। ভূমিকম্পকবলিত অঞ্চলে অবস্থিত রাজধানী ঢাকার ভবনগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দীর্ঘদিনের। এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্যসংগ্রহ ও মূল্যায়নের যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল, তা ব্যবহার না হলে ভবিষ্যতে সম্ভাব্য বিপর্যয়ের দায় এড়ানো যাবে না। রাজউক চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানটি চালুর বিষয়ে নতুন করে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ পুনর্গঠন করা হয়েছে এবং তহবিল বরাদ্দের প্রক্রিয়া চলছে। এটি অবশ্যই ইতিবাচক; তবে প্রশ্ন থেকেই যায়-কেন এত দেরি? কোটি কোটি টাকার জাতীয় সম্পদ বছরের পর বছর অব্যবহৃত পড়ার দায় কে নেবে? এখনই জরুরি ভিত্তিতে ইউএসআরআই চালু করে যন্ত্রপাতির কার্যকারিতা পরীক্ষা, প্রয়োজন হলে মেরামত, এবং প্রশিক্ষিত জনবলকে কাজে লাগানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি ভবনটির রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহারের বিষয়ে স্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি। এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল মানুষের জীবনরক্ষা, নগর নিরাপত্তা জোরদার করা। প্রশাসনিক শৈথিল্য ও সমন্বয়ের অভাবে যেন সেই লক্ষ্য ব্যর্থ না হয়-এখনই নিশ্চিত করতে হবে। জাতীয় সম্পদের এই অপচয় বন্ধ করে কার্যকর ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠাই সময়ের দাবি।