বহুল কাঙ্খিত বরিশালের মুলাদী ও গৌরনদী উপজেলার মধ্যবর্তী আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর নির্মিত সাহেবের চর-কাচিরচর সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে পুরো অনুষ্ঠান পন্ড করে দিয়েছে শত শত উত্তেজিত জনতা।
সেতু উদ্বোধনের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অনুষ্ঠানস্থলে আসার আগেই প্যান্ডেলসহ চেয়ার, টেবিল, অন্যান্য আসবাবপত্র, সেতুর নামফলক ভেঙে ফেলা হয়েছে। ফলে সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। হামলার ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বেলা বারোটার দিকে মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের কাচিরচর-সাহেবেরচর দাখিল মাদরাসা প্রাঙ্গনের উদ্বোধণী সভাস্থলে।
প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রধান অতিথি হিসেবে সেতুটি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার উদ্বোধণ করার কথা ছিলো। তবে তিনি অনুষ্ঠানস্থলে আসার আগেই জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের উপস্থিতিতে উত্তেজিত প্রায় পাঁচ শতাধিক জনতা হামলা চালিয়ে অনুষ্ঠানস্থলের প্যান্ডেল, চেয়ার-টেবিলসহ অন্যান্য আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছে। এসময় প্রশাসনকে অসহায় ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ৬১৯ মিটার দৈর্ঘের “সৌহার্দ্য সেতু” নির্মান কাজ চলমান রয়েছে। সেতুর নির্মান কাজ শেষ না হওয়া সত্বেও তড়িঘড়ি করে সৌহার্দ্য সেতুর নাম পরিবর্তন করে ‘৩৬ জুলাই সেত’ু নামকরণ করে শনিবার সেতু উদ্বোধনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এতে উত্তেজিত জনতা অনুষ্ঠানস্থলে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন।
তারা আরও জানিয়েছেন, সেতুটি নির্মানে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব এমদাদুল হক মজনু। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাকেও দাওয়াত দেওয়া হয়নি। যে কারনে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। হামলা চালিয়ে ওই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মুলাদী উপজেলার নদীঘেরা নাজিরপুর ইউনিয়নের প্রতিটি উন্নয়নমূল কাজ করেছেন ওই এলাকার বাসিন্দা এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. ইমদাদুল হক মজনু। তারই আপ্রান চেষ্ঠায় কাচিরচর, সাহেবেরচর, রামারপোল ও নাজিরপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে একত্রিত করণের জন্য আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর সৌহার্দ্য সেতু নির্মিত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা বেল্লাল বেপারী, নাঈম খানসহ অসংখ্য বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, তাদের এলাকার উন্নয়নের রূপকার সাবেক অতিরিক্ত সচিব ইমদাদুল হক মজনুসহ এলাকার কাউকে দাওয়াত না দিয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত দশটার দিকে মাইকিংয়ের মাধ্যমে সৌহার্দ্য সেতুর নাম পরিবর্তন করে “৩৬ জুলাই সেতু” নামকরণ করে শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সেতুর উদ্বোধণের ঘোষণা করা হয়।
স্থানীয়রা আরও জানিয়েছেন-এলাকার কাউকে দাওয়াত না দিয়ে তড়িঘড়ি করে সেতুর নাম পরিবর্তন করে উদ্বোধণের জন্য নামফলক নির্মানসহ সেতুর সন্নিকটে কাচিরচর-সাহেবেরচর দাখিল মাদরাসা প্রাঙ্গনে উদ্বোধণী সভার আয়োজন করায় এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি ২০১৪ সাল থেকে এ সেতুর নির্মান কাজ শুরু হলেও অদ্যবর্ধি নির্মানাধীন সেতুর কারণে ক্ষতিগ্রস্থ্য বাড়ি, মসজিদ ও জমির মালিকদের পাওনা টাকা অদ্যবর্ধি পরিশোধ করা হয়নি। সেতুর নিন্মাংশে এখনও বালু ভরাট পর্যন্ত করা হয়নি। বিষয়টি এলাকাবাসীরা লিখিতভাবে জেলা প্রশাসককে অবহিত করা সত্বেও তড়িঘড়ি করে সেতুর নাম পরিবর্তন করে উদ্বোধণের বিষয়টি রহস্যজনক।
স্থানীয় বাসিন্দা আশিকুর রহমান, আশরাফুল ইসলামসহ অন্যান্যরা বলেন-২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি স্থানীয় কলেজ মাঠে সেতু নির্মান কার্যক্রমের উদ্বোধণের সময় সর্বসম্মতিক্রমে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সেতুর নাম করণ করা হয়েছিলো সৌহার্দ্য সেতু। কিন্তু সেই সেতুর নাম পরিবর্তন করে এলাকার কাউকে এমনকি যার আপ্রান চেষ্ঠায় এখানে সেতু এসেছে সেই সাবেক অতিরিক্ত সচিবকে পর্যন্ত দাওয়াত না দিয়ে এবং ক্ষতিগ্রস্থদের জমি অধিগ্রহণের টাকা পরিশোধ না করে সেতু উদ্বোধনের আয়োজন করায় এলাকাবাসী ক্ষোভে ফেঁটে পরেন। পরবর্তীতে শত শত এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে শনিবার বেলা বারোটার দিকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানস্থলে হামলা চালিয়ে প্যান্ডেলসহ চেয়ার-টেবিল ও অন্যান্য আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছে। ফলে সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পন্ড হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে মুলাদী থানার ওসি মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, বিক্ষুব্ধ জনতার হামলা ভাঙচুরের ঘটনায় সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পন্ড হয়ে গেছে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।