অপরিণত বয়সে বিয়ের প্রবণতা এখনো ভয়াবহভাবে বিদ্যমান। পরিসংখ্যান বলছে, কিশোরীদের একটি বড় অংশ কৈশোরেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে, যা তাদের জীবনের স্বাভাবিক বিকাশকে থামিয়ে দিচ্ছে। অল্প বয়সে মা হওয়ার ফলে মাতৃ ও নবজাতক মৃত্যুর ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়, আর স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুর্বলতা এই ঝুঁকিকে আরও তীব্র করে তোলে। সরকারি স্বাস্থ্যসেবার সীমাবদ্ধতা, প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব এবং ডায়াগনস্টিক সুবিধার ঘাটতি মানুষের আস্থা কমিয়ে দিয়েছে। ফলে অনেক পরিবার বাধ্য হয়ে বিকল্প সেবার দিকে ঝুঁকছে, আর বাড়িতে সন্তান প্রসবের হার বেড়ে যাচ্ছে। এই বাস্তবতা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আইন প্রণয়ন বা সদিচ্ছার প্রকাশ যথেষ্ট নয়। মাঠপর্যায়ে কার্যকর উদ্যোগের অভাব এখনো প্রকট। সামপ্রতিক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দুর্গম এলাকায় কিশোরীদের গর্ভধারণের হার জাতীয় গড়ের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। এর অর্থ, মেয়েদের শিক্ষা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং সামাজিক উন্নয়ন সবই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অপরিণত বয়সে বিয়ে শুধু একটি পরিবারকে নয়, পুরো সমাজকে দীর্ঘমেয়াদে দুর্বল করে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট করে বলছেন, মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসেবা কাঠামোয় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও কিশোরী গর্ভধারণকে বিশেষ উদ্বেগের বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাদের বক্তব্য প্রমাণ করে, সমস্যার মূল কারণ শুধু দারিদ্র্য বা অশিক্ষা নয়, বরং স্বাস্থ্যসেবার কাঠামোগত দুর্বলতা। আমরা জানি, বাল্যবিবাহ দারিদ্র্য, সামাজিক চাপ ও নিরাপত্তাহীনতার ফল। কিন্তু নতুন করে স্পষ্ট হয়েছে যে স্বাস্থ্যসেবার দুর্বলতা এই সমস্যাকে আরও গভীর করছে। জননী প্রকল্পের মতো উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকার এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সমন্বিত ও শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে হবে। কিশোরীদের নিরাপদ শৈশব, যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার নিশ্চয়তা না দিলে টেকসই উন্নয়ন, বিশেষ করে এসডিজির লক্ষ্য অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে।বাল্যবিবাহ ও কিশোরী গর্ভধারণের বিরুদ্ধে লড়াই শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের সবার। সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা, দায়িত্ববোধ এবং কার্যকর পদক্ষেপই পারে এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ তৈরি করতে। কিশোরীদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করা মানে জাতির ভবিষ্যৎ রক্ষা করা।