ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হলে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে

এফএনএস | প্রকাশ: ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৬:০২ পিএম
ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হলে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে

চাঁদাবাজি আজ আমাদের সমাজের একটি ক্যানসারের নাম। এটি শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতিই করে না, মানুষের মনে ভয় ও নিরাপত্তাহীনতার বীজ বপন করে। ব্যবসায়ী, শিক্ষক, চিকিৎসক, এমনকি সাধারণ পথচারী পর্যন্ত চাঁদাবাজদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না। চাঁদাবাজি এখন শুধু শহর বা গ্রামের কোনো নির্দিষ্ট এলাকার সমস্যা নয়, এটি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই সমস্যা দিন দিন যেন আরও প্রকট আকার ধারণ করছে, যা আমাদের সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা প্রধানত চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন বেশি। তারা নিয়মিত চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছেন, যা তাদের ব্যবসার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। অনেক সময় চাঁদা না দিলে তাদের জীবনও হুমকির মুখে পড়ে। এ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল এবং বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানেও চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য দেখা যায়। এই চাঁদাবাজরা আইনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ চাঁদাবাজদের ভয়ে পুলিশ বা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করতেও ভয় পান, কারণ এর ফলে তাদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। স্বৈরাচারী শাসনের পতনের পরও চাঁদাবাজির ধারাবাহিকতা প্রমাণ করে, এটি কেবল কোনো নির্দিষ্ট দলের সমস্যা নয়, বরং এটি আমাদের সমাজ ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার গভীরে প্রোথিত একটি প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতি। এক পক্ষ ক্ষমতা হারালে আরেক পক্ষ সেই চাঁদাবাজির স্থান দখল করে নিচ্ছে। এই চক্র বিদ্যমান থাকলে বিনিয়োগ এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা অসম্ভব। সারা দেশে চলাচলকারী পণ্যবাহী ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করা হয়। এর প্রভাব পড়ে পণ্যের দামের ওপর। দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটির প্রথম সভায় শাকসবজিসহ নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে পথে পথে চাঁদাবাজি বন্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চেয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। চাঁদাবাজির কারণে একদিকে যেমন পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের পকেট থেকে বাড়তি পয়সা গুনতে হচ্ছে, অন্যদিকে এই চাঁদাবাজির শেষ পর্যন্ত মাসুল গুনতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকেই। ট্রাকের ভাড়ায় চাঁদাবাজির টাকা যুক্ত হওয়ায় পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। আমদানিনির্ভর পণ্যের দাম কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও বাজারে তাজা শাকসবজির দাম বেশি। পথে পথে চাঁদাবাজির কারণে এসব পণ্যের দাম বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমরা কেবল এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের হাতে হস্তান্তর করব হতাশা, ব্যর্থতা আর অচল রাজনীতির অভিশাপ। আমরা কেবল এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের হাতে হস্তান্তর করব হতাশা, ব্যর্থতা আর অচল রাজনীতির অভিশাপ। যদি হই আমরা দৃঢ়, যদি সত্যিই চাই পরিবর্তন—তাহলে নতুন প্রজন্মকেই নেতৃত্ব নিতে হবে। রাজনীতির লাইসেন্স বাতিল করে নাগরিক সমাজকে করতে হবে জবাবদিহির আসল শক্তি। তখনই চাঁদাবাজি থামবে, দুর্নীতি ভাঙবে এবং বাংলাদেশ তার প্রকৃত সম্ভাবনায় উন্মোচিত হবে।