আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও রূপসা কলেজের অনিয়ম-দুর্নীতির অন্যতম অধ্যক্ষ ফ. ম আব্দুস সালামের কোন নিয়ন্ত্রন ছিল না। রাজনীতি নিয়েই তিনি থাকতেন সবসময় ব্যস্ত। এ কারনে পূর্বে শিক্ষকদের আগমন ও প্রস্তান ছিল ফ্রি স্টাইলে এমন অভিযোগ কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক ও স্থানীয়দের। তবে ৫ আগষ্ট এই ফ. ম. আব্দুস সালাম পালিয়ে যাওয়ার পর কলেজ শিক্ষার্থীদের মাঝে ও স্থানীয় লোকজন ফিরে পায় স্বস্তি।
বর্তমানে রূপসা কলেজের নতুন সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম-সচিব ও নারায়ণগঞ্জের প্রাক্তন জেলা প্রশাসক তুখোড় আমলা রূপসার কৃতি সন্তান এস, এম, হারুনার রশিদ সভাপতি হওয়ার পর কলেজ গভর্নিং বডির অনুষ্ঠিত প্রথম সভায় কলেজের আর্থিক ও প্রশাসনিক দুর্বলতা দেখে তিনি হতাশা ব্যক্ত করেন।
ওইদিন কলেজের প্রশাসনিক ও আর্থিক সিস্টেমের আমুল পরিবর্তন করে প্রথমেই হাত দিয়েছেন ফাইনান্সিয়াল ডিসিপ্লিনের দিকে।
পূর্বে ছাত্র-ছাত্রীদের বেতন সহ বিভিন্ন আয় কলেজের একাউন্ট বিভাগে ক্যাশে টাকা জমা করা হতো এবং সেই ক্যাশ থেকে বিভিন্ন ব্যয় মিটানোর পর অবশিষ্ট টাকা ব্যাংকে জমা করা হোত। তবে নতুন সভাপতি ওই সিস্টেম বন্ধ করে সকল আদায় সরাসরি ব্যাংকে জমা করার নির্দেশ প্রদান করেন।
কলেজ প্রিন্সিপাল ও সংশ্লিষ্ট কয়েকজন শিক্ষক অভিমত ব্যক্ত করে এবিষয়ে বলেন, ব্যাংকের স্টাফ স্বল্পতার কারনে তারা এ দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। তারপর নতুন সভাপতি মিটিং এ বসেই জনতা ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের একজন ডাইরেক্টরকে টেলিফোন করে কলেজকে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানান। এরপর মিটিং শেষ হওয়ার আগেই জনতা ব্যাংক রূপসা শাখার ম্যানেজার কলেজে এসে উপস্থিত হন এবং সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। তখন কলেজের সকল একাউন্ট বন্ধ করে একটি একাউন্ট চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। দৈনন্দিন কার্যক্রম চালানোর জন্য প্রিন্সিপালের হাতে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে একটি ফান্ড রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয় এবং উক্ত খরচের এডজাস্ট করার পর পুনরায় প্রিন্সিপালের হাতে অর্থ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গভর্নিং বডির সভায় গ্রহন করা হয়। কলেজের আর্থিক দুর্নীতির খবর সকলের মুখে মুখে ছিল। কিন্তু বর্তমান সিদ্ধান্তে বহু বছর পর অবশেষে কলেজের আর্থিক ম্যানেজমেন্ট এর শৃংখলা ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে এমনটি মন্তব্য করেছেন কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। অধ্যক্ষ সালামের সময়ে শিক্ষকদের উপর তেমন নিয়ন্ত্রণ ছিলনা। প্রশাসনে দক্ষ নতুন সভাপতি
বর্তমানে প্রিন্সিপালের কক্ষে রক্ষিত হাজিরা খাতায় আগমন ও প্রস্তানের সময় উল্লেখ করে প্রত্যকে শিক্ষককে দস্তখত করার নির্দেশনা জারি করেন। এভাবে শিক্ষকদের মধ্যে শৃংখলা আনার ব্যবস্থা করেন নতুন সভাপতি হারুনার রশিদ।
হাজিরার নতুন এ সিস্টেম কার্যকরী হচ্ছে কি-না গভর্নিং বডির নতুন সদস্য রূপসা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তা মনিটরিং এর দায়িত্ব অর্পন করা হয়।
এ কলেজটিতে বছর বছর ধরে অনেকগুলো ল্যাপটপ অকেজ হয়ে পড়ে রয়েছে। এমনকি একটি সাজানো গোছানো কম্পিউটার ল্যাবও পড়ে রয়েছে। সেই ল্যাবটি ভিজিট করে তিনি হতাশা ব্যক্ত করেন। তারপর
তিনি আই সিটি শিক্ষকের সাথে কম্পিউটারে অভিজ্ঞ কয়েকজন শিক্ষককে যুক্ত করে একটি টিম গঠন করে দেন এবং আইসিটি সিলেবাস সম্পন্ন করার সাথে সাথে শিক্ষক ও ছাত্রদেরকে বর্তমান সময়ের প্রয়োজনীয় কয়েকটি বিষয়ে যথা অফিস এপ্লিকেশন, অনলাইন টিকিট, জমির খাজনা, অনলাইন পাসপোর্ট, ইটিন, ইরিটার্ন, অনলাইন ইউটিলিটি বিল পরিশোধ ,অনলাইন ভর্তি, রেজাল্ট, নিবন্ধন, অন লাইন ব্যাংকিং, ইকমার্স সহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন তিনি। এছাড়া এ কলেজে একটি খেলার মাঠ থাকলেও রয়েছে অব্যবহৃত অবস্থায়।
খেলাধুলার চর্চা না থাকায় কিছু যুবক মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। নতুন এ সভাপতি একজন জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড় হওয়ার কারনে কলেজের খেলাধুলার প্রতি জোরালো ভুমিকা রাখছেন এবং কলেজের ছাত্রদের সাথে আলোচনা করে ফুটবলের জন্য মাঠ প্রস্তুত এবং ক্রিকেটের জন্য পীচ তৈরী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে ইতিমধ্যে ফুটবল ও ক্রিকেট পাঁচ তৈরী সম্পন্ন করা হয়েছে। অচিরেই বিনোদনের জন্য খেলা ধুলা শুরু হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
কলেজে কোন রোভার স্কাউট না থাকলে-ও তিনি স্কাউটের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে খুলনা থেকে দুজন রোভার স্কাউটকে এনে কলেজের শিক্ষক ও ছাত্রদের সাথে মতবিনিময় সভা করে টিম গঠনের ব্যবস্থাও নিয়েছেন। তাছাড়া ৩ জন শিক্ষককে বি এল কলেজে স্কাউট ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করেছেন। কলেজের নতুন সভাপতি কলেজের আর্থিক, প্রশাসনিক, শিক্ষা ও খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশ উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহন করেছেন।
এর ফলে ছাত্র শিক্ষকদের মাঝে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই রূপসা কলেজ প্রাণ ফিরে পাবে বলে সংশ্লিষ্ট সকলেই আশাবাদী।