পটুয়াখালীর বাউফলে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতির পর ব্যবসায়ী শিবানন্দ রায় শিবু বণিককে অপহরণের দুই দিন পর উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রবিবার রাত দেড়টার দিকে উপজেলার কচুয়া গ্রাম থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। বাউফল থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা শাখার যৌথ টিমের চিরুনী অভিযানে এ ঘটনার সাথে গ্রেফতারকৃত ৫জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।”কম সময়ে কোটিপতি হওয়ার নেশায় পরিকল্পিতভাবে ডাকাতি ও ব্যবসায়ীকে অপহরণ” করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার জাহিদ। সোমবার দুপুরে বাউফল থানায় সাংবাদিক সম্মেলন করে এমন তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। পুলিশ সুপার জানান, ঝালকাঠি সদর থানার বালিগোনা গ্রামের আকবর শরীফের ছেলে মো. মাসুদ শরীফ (২৪) ফ্রেশ কোম্পানির ‘বাউফল বিক্রয় প্রতিনিধি (এস.আর)’ হিসেবে চাকরি করেন। চাকরির সুবাদে ব্যবসায়ী শিবু বণিকের প্রচুর অর্থ সম্পদ আছে বলে জানতে পারেন। এতে কম সময়ে কোটিপতি হওয়ার নেশা পড়ে যান মাসুদ। নিজে নিজে সংকল্প করে শিবু বণিককে অপরহণ করে কোটিপতি হবেন। তার এ বাসনা কচুয়া গ্রামে আরেক জনের সাথে আলোচনা করে। পরে এমন পরিকল্পনা নিয়ে কচুয়া গ্রামে মাসুদের ভাড়া বাসায় একাধিক বার বৈঠক করেন মাসুদ ও অন্য সদস্যরা। বৈঠকে সিদ্ধান্তে ৩ জানুয়ারী শুক্রবার রাত সোয়া ১০টার দিকে ৯ সদস্যের ডাকাত দল শিবু বণিকের কানু প্রিয়া ভান্ডারে ডাকাতি করেন। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুই কর্মচারী তাপস ও শংকরের হাত পা বেধে ফেলে। পরে ক্যাশ থেকে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা লুট করে ব্যবসায়ী শিবু বণিককে অপরহণ করে পাখি ট্রলারযোগে তেঁতুলিয়া নদীর দিকে চলে যান। পরে একটি নির্জন চরে তাকে (শিবু বণিক) আটকে রেখে পরিবারের কাছে ১ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। ১৫ মিনিটের মধ্যে পুরো ডাকাতি ও অপহরণ প্রক্রিয়া শেষ করে ডাকাতরা। ঘটনার পর থেকে থানা ও জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা একাধিক দল বিশেষ অভিযান অব্যহত রাখে। গতকাল রাতে বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে কুচয়া গ্রাম মুন্সি বাড়ির মসজিদের সামনে মাসুদের ভাড়া বাসা থেকে অপহৃত ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত ৫জনকে পৃৃথক পৃথক স্থান থেকে গ্রেপ্তার করে উদ্ধার অভিযানকারী দল। গ্রেপ্তাররা হলেন- পরিকল্পনাকারী ফ্রেশ কোম্পানির এস.আর ঝালকাঠি উপজেলার বালিগোনা গ্রামের মাসুদ শরীফ (২৪), বাউফলের বড় ডালিমা গ্রামের মিন্টু মৃধার ছেলে মিরাজ মৃধা (২০), একই গ্রামের বাবুল প্যাদার ছেলে মো. জহির প্যাদা (২৭), গকুল চন্দ্র মিস্ত্রির ছেলে বিধান চন্দ্র মিস্ত্রি (২২) ও ভোলার দক্ষিণ আইচার চর পাচুকিয়া গ্রামের জাকির সিকদারের ছেলে মো. মাহফুজ(১৬)। এ সময় ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ৫টি দেশীয় অস্ত্র, ৭টি মোবাইল ফোন, দুই জোড়া জুতা, একটি মানকি ও লুট করা দেড় লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। পুলিশ সুপার জাহিদ আরও জানান, এ ঘটনার সাথে জড়িত আরও ৪জন পালাতক রয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন অন্যতম প্রধান পরিকল্পনাকারী। তিনিই অস্ত্র ঢাকা থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত জ্যাকেট, জুতা, মাস্ক, মানকি টুপি এবং চন্দ্রদ্বীপ থেকে ট্রলার ভাড়া করে দেন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে এ চারজন পালিয়ে যায়। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- পটুয়াখালী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মাদ সাজেদুল ইসলাম সজল, সহকারি পুলিশ সুপার ( বাউফল সার্কেল) আরিফ মুহম্মদ শাকুর, বাউফল থানার ওসি কামাল হোসেন। উদ্ধার হওয়া ব্যবসায়ী শিবানন্দ রায় বনিককে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, ডাকাতির ঘটনার পর গত শনিবার ব্যবসায়ী শিবানন্দ রায় বণিকের স্ত্রী বাদি হয়ে ডাকাতি ও অপহরণ মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের আদালতে প্রেরণ করা হবে। বাকি আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।