দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ক্লাসে আবিস্কার লিখতে না পারায় পেন্টি দিয়ে ৪র্থ শ্রেণির তিন শিক্ষার্থীকে বেদম মারধরের অভিযোগ উঠেছে খলিলপুর ছাউনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। পিটুনিতে আহত শিক্ষার্থীরা স্থানীয় চিকিৎক ঢেড়েরহাটের ডা: রাসেদিন এর কাছে চিকিৎসা নিয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছে। এঘটনায় অভিভাবক মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পার্বতীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বিষয়টি জানে বলে দাবী করেন এই শিক্ষা কর্মকর্তা মো: এনামুল হক সরকার।
সরেজমিনে গেলে কথা হয়, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে। তারা বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুলে প্রায় শিক্ষার্থীদের পেটানোর অভিযোগ করেন। একটা বাচ্চা না হয় ক্লাসে আবিস্কার লিখতে পারেনি তাই বলে কি এভাবে ছাত্র কে পেটাতে পারে?। পার্বতীপুর উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নে খলিলপুর ছাউনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সম্প্রতি এ ঘটনা ঘটে।
বিদ্যালয় ঘেষা বাড়ী মনোয়ার হোসেন বলেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও কারণে-অকারণে ব্যবহার করে কথা বলার অভিযোগ করেন। এই আচরনের কারনে নাতিকে ভর্তি করাতে পারিনি। টাকা-পয়সা খরচ করে ঢেড়েরহাটের একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি করাতে বাধ্য হয়েছি। প্রায় স্কুল থেকে বাচ্চাদের কান্নার আওয়াজ শুনি বাড়ীতে।
অভিভাবক এবং রোল-১৭, ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র আল হাসান কান্নারত অবস্থায় বলে, ক্লাসে আবিষ্কার লিখতে না পারায় প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম স্যার পেন্টি বা বেত দিয়ে বেধরক পেঠান। ভয়ে আমি ৩ থেকে ৪ দিন স্কুলে যাইনি। এসময় সানজিমন ও মেরাজুল কে পেন্টি দিয়ে পিটিয়েছে স্যার।
আল হাসানের বাবা বায়জিদ আলী বলেন, আমার জানা ছিলো না একজন শিক্ষক ছাত্রকে এভাবে মারতে পারে। পিঠে, পায়ে, শরীরে ও পায়ুপথে আঘাতের চিহৃ দেখে দুই তিন রাতে ঘুমাতে পারিনি। বাচ্চা টা আমার ৩/৪ স্কুলে যেতে পারেনি। ঢেড়েরহাট এলাকার ডা: রাসেদিন এর কাছে চিকিৎসা শেষে স্কুলে দিয়ে আসি। মারার কারন জানতে চাইলে, উল্টো প্রধান শিক্ষক আমার সাথে অসৌজনমূলক আচরন করে। তিনি তার ছেলের নির্যাতনের বিচার চান।
শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন অজুহাতে প্রায় মারধর করে। স্যার ঠিক মতো স্কুলে আসে না। স্কুলের ছুটির আগেই চলে যায়। এটা স্যারের নিয়মিত বিষয়।
অভিভাবক মাজিদুর রহমান মাজুু বলেন, সম্পর্কে আল হাসান আমার ভাতিজা হয়। সে স্কুলে আবিস্কার লিখতে না পারায় প্রধান শিক্ষক বেধরক মারধর করে। এবিষয়ে স্কুলে গিয়ে জানতে চাওয়ায় প্রধান শিক্ষক আমার তর্কে জড়িয়ে যায়। সরি না বলে উল্টো আমাকে শাসিয়ে কথা বলে। এরআগে ক্লাসে পড়া না পারায় একইভাবে পেটানোর অভিযোগ রয়েছে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান রফিকুল ইসলাম বিভিন্ন অজুহাতে শিক্ষার্থীদের প্রায়ই নির্যাতন করেন। তাঁর শাস্তি হওয়া দরকার। ঘটনার পর থেকে প্রায় ৫০ জন বাচ্চা নির্যাতনের ভয়ে স্কুলে আসেনি বলে তিনি দাবী করেন।
আরেক এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ইকবাল হোসেন বলেন, একজন সুস্থ মানুষ বাচ্চাদের এভাবে পেটাতে পারে না। উনি তো অভিভাবকের সাথেও খারাব ব্যবহার করে থাকে। আমি অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের শাস্তির দাবি করছি।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে, খলিলপুর ছাউনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি ক্লাস নিচ্ছিলাম শব্দার্থ, স্কুল ব্লাক বোর্ডে একটা লেখা ৭/৮ বার লিখেও পারছিল না। ক্লাসে শুধু হইচই করে। তাই তাদের মারধর করা হয়েছে। তবে, মারধর করা ঠিক হয়নি বলেও স্বীকার করেন তিনি।
এব্যাপারে পার্বতীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো: এনামুল হক সরকার বলেন, বিষয়টি জানা নেই, যদি এরকম ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।