ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে দু’ফসলি জমির টপসয়েল ও খাস জমির মাটি কেটে বিক্রির ধূঁম পড়েছে। উপজেলার অরূয়াইল পাকশিমুল চুন্টা নোয়াগাঁও কালীকচ্ছের ধর্মতীর্থ এলাকার আকাশী হাওর এলাকায় ড্রেজার ও বেকুর সাহায্যে চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। ফলে ওই এলাকা গুলোর পরিবেশ ও কৃষিতে বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই মাটি প্রতিদিন বাল্কহেডে করে যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ইটভাটায়। কিছু যাচ্ছে ট্রাকে করে। দেদারছে মাটি কাটা চললেও ইউপি ভূমি অফিসের লোকজন একেবারেই নীরব। চেয়ারম্যানরা বলছেন আমরা কিছুই জানি না। স্থানীয় কৃষকরা বাঁধা দেওয়ায় তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধমকি দিয়ে আতঙ্কিত করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিন অনুসন্ধান ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের তেলিকান্দি, জয়ধরকান্দির হটকিতলা বাঘ, দোলাইদার, মাইজেরকান্দা ও চারাবাদা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলছে জমির টপসয়েল কেটে বিক্রির মহোৎসব। তেলিকান্দিতে নাজিম মিয়া, দোলাইরদারে ফরিদুল আমীন ও চারাবাদা এলাকায় সাবেক ইউপি সদস্য মো. সালাহ উদ্দিনের নেতৃত্বে চলছে এই বাণিজ্য। পাশের জমির মালিক ও কৃষকদের কৌশলে বেকায়দায় ফেলে টপসয়েল বিক্রিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এতে করে শুধু জমির উর্বরতাই ধ্বংস হচ্ছে না, পাশের জমি গুলোও ভেঙ্গে পড়ছে। হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশের ভারসাম্য। হ্রাস পাচ্ছে কৃষি জমি। দিনদিন কমে যাচ্ছে কৃষি পণ্যের উৎপাদন। কৃষির উপর নির্ভরশীল পরিবার গুলো কঠিন সংকটে পড়ছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে দেওয়া হচ্ছে হুমকি ধমকি। কোন ধরণের প্রতিকার না পেয়ে তারা হতাশ হয়ে পড়ছেন। সূত্র জানায়, প্রভাবশালী চক্রটি সেখানকার মাটি কাটার কাজে ব্যবহার করছে বেশ কয়েকটি বেকু মেশিন। রয়েছে ডজন খানেক ট্রাক্টরও। বেকু মেশিনে ট্রাক্টরে তুলে। ট্রাক্টর গুলোর সাহায্যে তিতাস নদীতে অপেক্ষমান ১৫/১৬ বাল্কহেডে মাটি তুলে নিয়ে যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। সালাহ উদ্দিন বলেন, আমি মাটি কেটে আমার জমির উঁচু নীচু ঠিক করেছি। গত ৪-৫ দিন আগেই মাটি কাটা বন্ধ করে দিয়েছি।
অরূয়াইল ইউনিয়নের দুবাজাইল রাজাপুর গ্রামের মাঝামাঝি স্থানে মেঘনার পাড় ঘেষা কয়েক একর ফসলি জমির মাটি লুটে নিচ্ছে খেকুরা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদী, কৃষিজমি ও কৃষকরা। রহস্যজনক কারণে নীরব স্থানীয় ভূমি অফিস। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সামছু রফিক আব্দুল আজিজ ও মাসুদরা এই লুটপাটের তান্ডবে শেল্টার দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতা এনামুল হক। দুই গ্রামের কৃষক ও সাধারণ মানুষের বাঁধায় কিছুদিন বন্ধ ছিল তাদের মাটি বিক্রি। গত কয়েকদিন ধরে আবার বুক উচিয়ে দেদারছে ফসলি জমি কেটে মাটি বিক্রি করছেন। মাঝে বাঁধা দেওয়ায় বিএনপি নেতা এনামুলসহ স্থানীয় অনেক কৃষককে হুমকি দিয়েছেন মাটি খেকো চক্রের সদস্যরা। এতে অনেক কৃষক ভীতসন্ত্রস্থ হয়ে পড়েছেন। ইউপি বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল বাতেন, যুবদলের সদস্য সচিব কামাল, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সোহেল ভূঁইয়া, বর্তমান যুগ্ম আহবায়ক নাজিম উদ্দিন ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা শফিক মোল্লা আক্ষেপ করে বলেন, অনুমতি বা বৈধ কাগজপত্র ছাড়া গত দুইমাসে মাঠের ফসলি জমি কেটে গ্রাম দুটিকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আমরা তাদের যথোপযুক্ত বিচার চাই। অরূয়াইল ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া ও পাকশিমুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাউছার হোসেন বলেন, তারা ফসলি জমির মাটি কাটার অনুমতির কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। ওদিকে কালীকচ্ছ ইউনিয়নের ধর্মতীর্থ এলাকার আকাশী হাওরে গত ১০-১৫ দিন ধরে চলছে ফসলি জমি কাটার প্রতিযোগিতা। মাঠে তাকালে চারিদিকে দেখা যায় শুধু মাটি ভর্তি জ্যাম ট্রাক। মাটিবহনকারী এসব ট্রাকের ধূঁলায় অন্ধকার হয়ে যায় মাঠ ও সরাইল-নাসিরনগর সড়ক। দূর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। গত ২-৩ বছরে মাটি কেটে ওই হাওরকে ৫-৬ ফুট নীচু করে ফেলেছেন কয়েকটি চক্র। তারা ধ্বংস করে দিয়েছেন হাওরের কৃষি উৎপাদন। এছাড়া নোয়াগাঁও এর তেরকান্দা, চুন্টা, সরাইল সদর ও শাহজাদাপুরেও চলছে ফসলি জমি কাটার ধূঁম।