মোহনপুরে এক্সকাভেটরের নিচে ফেলে কৃষককে হত্যা

এম এম মামুন; রাজশাহী | প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৫:৪৭ পিএম
মোহনপুরে এক্সকাভেটরের নিচে ফেলে কৃষককে হত্যা
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় ফসলি জমিতে পুকুর কাটতে বাধা দেওয়ায় এক কৃষককে এক্সকাভেটরের চাকার নিচে ফেলে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার রাত ৯ টার দিকে উপজেলার বড় পালশা গ্রামে ওই কৃষক নিহত হন। নিহত আহমেদ জোবায়ের (২৫) উপজেলার ধুরইল ইউনিয়নের বড় পালশা গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে। এ ঘটনায় গতকাল রাতে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে এক্সকাভেটরের চালক আবদুল হামিদকে আটক করে। তাঁর বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়। স্থানীয় লোকজন বলেন, বড় পালশা গ্রামে মাঠে সব আবাদি জমি। সেখানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কেউ কোনো পুকুর খনন করেননি। হঠাৎ গতকাল বুধবার রাতে তাঁরা জানতে পারেন, সেখানে পুকুর খনন করার জন্য গোপনে এক্সকাভেটর নামানো হয়েছে। এই খবর মসজিদের মাইক থেকে মোয়াজ্জিন আবদুল মান্নান ঘোষণা করেন। তখন গ্রামের লোকজন মাঠের দিকে ছুটে যান। প্রথম দিকে জুবায়েরসহ সাত থেকে আটজন পুকুর খননের প্রতিবাদ জানান। তখন চালক আবদুল হামিদ দ্রুত এক্সকাভেটরের বাকেট (মাথা) চারপাশে ঘোরাতে থাকেন। এতে ধাক্কা লেগে জোবায়ের মাটিতে পড়ে যান। চালক আবদুল হামিদ এক্সকাভেটর নিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে জোবায়ের গায়ের ওপর দিয়ে এক্সকাভেটর চালিয়ে দেন তিনি। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। ঘটনার পর গ্রামের শতাধিক মানুষ মাঠে নেমে যান। তাঁরা চালক হামিদকে আটক করেন এবং এক্সকাভেটরে আগুন ধরিয়ে দেন। ঘটনাস্থলে মোটরসাইকেল নিয়ে গিয়েছিলেন পুকুর খননের উদ্যোক্তা ধুরইল ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামান (বকুল)। এলাকাবাসীর তোপের মুখে তিনি মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যান। স্থানীয় লোকজন তাঁর মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন। বিএনপি নেতা আনিসুজ্জামানের মুঠোফোনে এ ব্যাপারে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে আরেক প্রান্ত থেকে একজন বলেন, ‘এটি বকুলের ফোন নয়।’ এক্সকাভেটরের চাকার নিচে পড়ে নিহত হওয়ার পর এলাকার লোকজন মোটরসাইকেরে আগুন ধরিয়ে দেন। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) উপজেলার বড় পালশা গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, আগুনে পোড়া মোটরসাইকেল পড়ে আছে। এক্সকাভেটরের নিচে আগুন জ্বলছে। অসংখ্য মানুষ সেখানে হাজির হয়েছেন। বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছিলেন ধুরইল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কাজিম উদ্দিন সরকার। তিনি বলেন, ‘আনিসুজ্জামান এই পুকুর খননের সাথে জড়িত বলে তিনি জেনেছেন। আনিসুজ্জামান বিএনপির ইউনিয়ন কমিটিতে আছেন; কিন্তু তিনি বিগত সময় আওয়ামী লীগের ভোট করেছেন। এখন আবার বিএনপির ক্ষমতা খাটিয়ে এখানে ধানি জমিতে পুকুর খননে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ ঘটনা সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, তদন্ত করে সুষ্ঠু বিচার হওয়া উচিত।’ রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ভেকুর বাকেটের আঘাতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। দুপুরে নিহতের বাবা থানায় এসে ৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছেন। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঈনুদ্দীন আজ সকালে বলেন, চালক আবদুল হামিদকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। নিহতের বাবা বাদী ৭ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ময়নাতদন্তের শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশী অভিয়ান অব্যাহত রয়েছে।
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে